গ্রিসের বাংলাদেশিদের দুঃখের নাম ভারত। গ্রিসে বাংলাদেশি এলাকা ওমানিয়া-গেরানিয়ার পথে-প্রান্তরে শুধু ভারতের বিরুদ্ধে দুঃখগাথা। অনেকেই ২০-৩০ বছর ধরে গ্রিসের স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অথচ পরিবার আনতে পারছেন না। গ্রিসে বসবাসরত ৩০ হাজার বৈধ-অবৈধ বাংলাদেশির একটাই দাবি- গ্রিস এম্বাসি বাংলাদেশে স্থাপন।
গ্রিসের দূতাবাস ভারতে। বাংলাদেশিদের ভিসা তুলতে হলে অথবা দূতাবাসের যে কোনো কাজে যেতে হয় ভারতে। এখানেই শুরু নানান হয়রানির। এখন তো ভারতের ভিসা পাওয়া যায় না। যখন ভিসা নিয়ে সমস্যা ছিল না তখনো ভারতের কারণে হাজার হাজার বৈধ বাংলাদেশি তাদের পরিবার আনতে পারেননি।
সুনামগঞ্জ সদরের বাসিন্দা করিম মিয়া ২৩ বছর আগে সড়কপথে আসেন গ্রিসে। নিজের ছেলে ও পরিবার আনার জন্য ভারতে পাঠিয়েও ভিসা করাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ভারতে গিয়ে দু-তিন মাস থাকতে হয়। দালাল চক্র অনেক টাকা চায়। দালাল না ধরলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ভিসা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।’ নজরুল ইসলাম নামে একজন ২০২২ সালে বৈধ হলেও স্ত্রীকে আনতে পারছেন না একই সমস্যার কারণে। ১৮ বছর ধরে গ্রিসে আছেন বিক্রমপুরের তপন মৃধা। মিনি মার্কেট রয়েছে তাঁর। স্ত্রী-কন্যাকে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তিনি বলেন, ‘এখানে ব্যবসা ফেলে দু-তিন মাস ভারতে গিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।’
সাথী বেগম নামে চাঁদপুরের এক নারী ছয় বছর আগে বৈধ হন। তিনি স্বামী ও সন্তানকে আনতে পারছেন না। তাঁর অভিযোগ, ভারতে দালালরা অনেক টাকা চায়। বাংলাদেশে গ্রিস এম্বাসি হলে খুব সুবিধা হতো। দাদন মৃধা নামে এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও গ্রিক বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জানান, গত বছর মে মাসে গ্রিস সরকার বাংলাদেশসহ নতুন ছয় দেশে এম্বাসি খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশ সরকার উদ্যোগ নিলেই বাংলাদেশে গ্রিস এম্বাসি হতে পারে। বাংলাদেশে গ্রিস এম্বাসি হলে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট ও রেস্টুরেন্ট সেক্টরে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক আনা ও গ্রিসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।
দ্বীপে ছয় মাসের চাকরি : গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের ওমানিয়ার কালিয়া গলি মানেই হচ্ছে বাংলাদেশিদের আধিপত্য। একসময় এ গলি ছিল আফ্রিকানদের দখলে। বাংলাদেশিরা গত দুই যুগে এ জায়গায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছেন। এখানে কথা হয় চাঁদপুরের সাথী বেগমের সঙ্গে। তিনি চা-পান বিক্রি করছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, প্রতিদিন কত আয় হয়? হেসে বললেন, ‘৫০-৬০ ইউরো।’ এ আয় দিয়ে চলে? জানালেন, কয়েক দিনের মধ্যে আইল্যান্ডে চলে যাবেন। সেখানে ছয় মাস কাজ করবেন হোটেলে। প্রায় ১০ হাজার ইউরো ইনকাম করে চলে যাবেন বাংলাদেশে। গ্রিসে যাদের কাগজ হয়েছে, তাদের কাছে আইল্যান্ড মানে দ্বীপের চাকরি খুব জনপ্রিয়।
গ্রিসে রয়েছে হাজারো দ্বীপ। কয়েক শ ছোট ছোট দ্বীপ পর্যটনের জন্য খুব বিখ্যাত। সারা বিশ্ব থেকে এসব দ্বীপে হলিডে কাটাতে লোকজন আসেন। এখানকার হোটেল, রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশিদের খুব চাহিদা।
নূরুজ্জামান রাজা নামে সিলেটের সুবিদবাজারের তরুণ করফু দ্বীপে যাবেন শেফ হিসেবে কাজ করতে। তিনি গত বছরও একই রেস্টুরেন্টে মেইন শেফ হিসেবে কাজ করেছেন। এবারও যাবেন ওই দ্বীপে। এ ছয় মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় অন্তত ৩৫ লাখ টাকার মতো বেতন পাবেন। তিনি জানান, ঠান্ডা মৌসুম শুরু হলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। মালিকরা চাকরি নেই বলে চিঠি দেন। সরকার পরবর্তী ছয় মাসের জন্য ভাতা দেয়। প্রতি মাসে আরও ৮০০-১০০০ ইউরো। ভারতে এম্বাসি থাকায় গ্রিসে পরিবার আনা অনেক ঝামেলা হওয়ায় এখানকার প্রবাসীরা ছয় মাস আইল্যান্ডে আয় করে চলে যান বাংলাদেশে। পরিবারের সঙ্গে চার-পাঁচ মাস কাটিয়ে আবার পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই চলে আসেন।