ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চাঁদা বা সহযোগিতা গ্রহণের রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের কাছে এই সহযোগিতা চাওয়ার নানা পন্থা আছে। এর মধ্যে যেগুলো শরিয়তের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে তা গ্রহণযোগ্য আর যা অসংগতিপূর্ণ তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। ইসলামের নামে যে কাজই করা হোক না কেন, শরিয়তের মাপকাঠি দিয়ে মেপে নিতে হবে।
এমনকি নামাজের মতো ইবাদতও শরিয়তের নিয়ম রক্ষা করে হচ্ছে কি না তা দেখে নিতে হবে। যেমন—কেউ যদি বিনা অজুতে নামাজ পড়ে বা ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলার দিকে না ফিরে নামাজ পড়ে তাহলে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। দ্বিনি কাজের নামে চাঁদা বা সহযোগিতা গ্রহণেরও নির্ধারিত কিছু শর্ত আছে, যা পাওয়া গেলেই শুধু তা জায়েজ হতে পারে। বর্তমান যুগের বহু চাঁদা গ্রহণকারী এসব শর্তের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না।
মানুষের আর্থিক লেনদেন দুই প্রকার—কোনো কিছুর বিনিময়ে কোনো কিছু দান করা এবং বিনিময় ছাড়াই কোনো কিছু দান করা। বিনিময়ভিত্তিক লেনদেনের তুলনায় বিনিময়হীন লেনদেনের ত্রুটি বেশি। বিনিময়হীন লেনদেন আবার দুই প্রকার—হাদিয়া ও চাঁদা। বর্তমান যুগে হাদিয়া ও চাঁদা উভয় ক্ষেত্রেই শরিয়ত প্রদত্ত শর্তগুলো মানা হচ্ছে না।
যেমন—নির্বিচারে হাদিয়া ও চাঁদা গ্রহণ করা। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে বস্তু (উপহার হিসেবে) আগমনের প্রতীক্ষায় তুমি ছিলে না, তা এলে গ্রহণ করো। না এলে তার চিন্তায় চিন্তিত হয়ো না।’ হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, হাদিয়া, চাঁদা বা উপহারের আকাঙ্ক্ষা অন্তরে লালন না করা প্রয়োজন।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার বিনিময় করো, হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে।’ এই হাদিস থেকে জানা যায়, যারা উপহার ও চাঁদা দেয় এবং সহযোগিতা করে থাকে তাদের জন্য আলেমদের ও দ্বিনি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো উপহার থাকা ভালো (সেটা আর্থিক হতে পারে, আবার দ্বিনি কোনো কার্যক্রমও হতে পারে)।
চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে বহু অনিয়ম হয়ে থাকে এবং প্রয়োজনীয় দ্বিনি সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। চাঁদা আদায়ের একটি সাধারণ নিয়ম হলো কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত গ্রহণ না করা; বিশেষত সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে না দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত কারো কাছ থেকে তার সাধ্যের বেশি কোনো দান গ্রহণ করতেন না। দাতার মনে কষ্ট আসতে পারে, এমনভাবেও কোনো চাঁদা আদায় করা উচিত নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে দান না করলে তার দান গ্রহণ করা হালাল নয়।’
আলেম-ওলামা যাঁদের সমাজে দ্বিন ও ইসলামের প্রতিনিধি মনে করা হয়, তাঁরা মানুষের কাছে এমনভাবে চাইবেন, যাতে তাঁর অসম্মান না হয়। পাশাপাশি দ্বিন, দ্বিনি প্রতিষ্ঠান ও দ্বিনদার মানুষের অসম্মান হয় এমন ব্যক্তির কাছেও দ্বিনি কর্মকাণ্ডের জন্য চাঁদা বা সহযোগিতা চাওয়া উচিত নয়। দ্বিনি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হলে সাধারণ মুসলমানকে দ্বিনি কাজে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। কিন্তু সমাজের সম্মানিত আলেমরা এমন ব্যক্তির কাছে যাবেন না, যার কাছে গেলে হেয় হওয়ার ভয় থাকে; বরং এমন ব্যক্তিদের চাঁদা ফেরত দেবেন। ইনশাআল্লাহ, এতে দ্বিনি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; আল্লাহই দ্বিনি প্রতিষ্ঠানকে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে নেবেন।
যারা দ্বিনি কাজে সহযোগিতা চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো, ‘তোমাদের কাছে তিনি তা চাইলে ও তজ্জন্য তোমাদের ওপর চাপ দিলে তোমরা কার্পণ্য করবে এবং তখন তিনি তোমাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন। দেখো, তোমরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে। যারা কার্পণ্য করে তারা নিজের প্রতিই কার্পণ্য করে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন। তারা তোমাদের মতো হবে না।’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ৩৭-৩৮)
আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া থেকে
মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর
বিডি প্রতিদিন/মুসা