শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ভয়াবহ দরপতন ও অস্থিরতার কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য কেউ আসছে না। আইপিওশূন্য শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। গত বছরের আগস্টের পরে আট মাসে দেশের স্টক মার্কেটে কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) তালিকাভুক্ত হয়নি। এমনকি তালিকাভুক্তির জন্য কোনো কোম্পানির আইপিও আবেদনও নেই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে। এ অবস্থায় বিএসইসির ওপর ইস্যু ম্যানেজার ও উদ্যোক্তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। বাজারের চাহিদা সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে কোনো ধরনের বিনিয়োগে কেউ আস্থা পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে বাজারে আইপিও নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছে তার কারণে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। অনাস্থা কাটাতে বর্তমান কমিশন কার্যকর পদক্ষেপও নিতে পারেনি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টের পর নতুন কমিশন গঠন করা হয়। খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি শেয়ারবাজার সংস্কারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে শেয়ারবাজারে কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। এ সময় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় নেমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বরং আগের কমিশনের অনুমোদন পাওয়া একটি আইপিও বাতিল করে দেওয়া হয়। বর্তমান কমিশন বিভিন্ন বৃহৎ ও বহুজাতিক কিছু কোম্পানির সঙ্গে আইপিও ও বিনিয়োগ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করে। তবে ওই বৈঠকের বাইরে কিছুই হয়নি। সরকারি লাভজনক কয়েকটি কোম্পানির আইপিও বাজারে তালিকাভুক্তির কথাও জানানো হয়। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। ২০২৪ সালের আগস্টের আগে পর্যন্ত চারটি কোম্পানি এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং টেকনো ড্রাগস আইপিওতে শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে মোট ৬৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর আগে ২০২৩ সালে আইপিওর মধ্যে চার প্রতিষ্ঠান ২০২ কোটি টাকা, ২০২২ সালে ছয় প্রতিষ্ঠান ৬২৬ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার টাকা, ২০২১ সালে ১৫ কোম্পানি ১ হাজার ৮৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকা, ২০২০ সালে আট প্রতিষ্ঠান ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করে। জানতে চাইলে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান, শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অতীতে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে ওপর মহল থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়নি। একটা বিষয়ে এখানে কোনো ইনসেনটিভ নেই। তাহলে ভালো কোম্পানি আসবে কেন? এটা নিয়ে এখন কাজ হচ্ছে। টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে, ওরা এটা দেখবে। প্রতি মাসে না হলেও বছরে চার থেকে পাঁচটি ভালো কোম্পানির আইপিও থাকতে হবে। নইলে শেয়ারবাজারে কেউ আসবে না।’ জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অকার্যকর হয়ে পড়েছেন। আমরা এখন ভীতগ্রস্ত। যারা বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করবে তারাও কোনো আশা দেখছে না। ফলে আমাদের আইপিওবিহীন একটি শেয়ারবাজার হয়ে গেছে। আইপিওবিহীন শেয়ারবাজার কোনো শেয়ারবাজার নয়। আইপিও আনতেই হবে, এর বিকল্প কোনো চিন্তা করা যায় না। আমরা মনে করি আইপিওর যে প্রক্রিয়া, সেটি যারা আইপিওতে আসতে চায় তাদের জন্য কমফোর্টেবল (স্বাচ্ছন্দ্য) নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত সমস্যা কোথায় তা বের করা এবং দ্রুত সমাধান করা।’