কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা আঞ্চলিক সংকট তৈরি করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশসহ মহাসংকটে পড়তে পারে পুরো দক্ষিণ এশিয়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যকার এই উত্তেজনা কমানো না গেলে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে মহাসংকট দেখা দেবে। তাই উত্তেজনা নিরসনে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা না কমলে এর প্রভাব আশপাশের দেশগুলোতেও পড়বে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এর প্রভাব থেকে রেহাই পাবে না। শুধু বাংলাদেশই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। তাই হার্ডলাইনে না গিয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই সংকট নিরসন করতে হবে। এটা না হলে উত্তেজনা আরও বাড়বে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস বলেন, পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলা একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে হামলায় সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক উসকানিমূলক বক্তব্য উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভারত সিন্ধু নদের পানি বন্ধ করে দিলে এই উত্তেজনা আরও বাড়বে। এটা না করে যদি প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা যায় তাহলে সংকট নিরসন সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এজন্য উভয় দেশের সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কেউ যেন বিভেদ সৃষ্টিকারী উসকানিমূলক বক্তব্য না দেয়, সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উদ্বেগজনক। যুদ্ধাবস্থায় চলে গেলে ভারতের সামরিক ব্যয় বেড়ে যাবে, ফলে ভারতের সঙ্গে আমাদের শুল্ক সুবিধা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রভাবে ভারত-পাকিস্তান এখন মুখোমুখি। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বড় আকারে যুদ্ধ সংঘটিত না হলেও ছোটখাটো সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভারত-পাকিস্তান যদি পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেয় তাহলে এর প্রভাব প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশেও পড়তে পারে। শুধু বাংলাদেশই নয়, এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে এর মধ্যে না জড়ানো।
তাঁর মতে, কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের যে দ্বন্দ্ব, এর সমাধান দুই দেশের জনগণই করতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা যত দিন বড় আকারে এর সমাধান না চাইবে, তত দিন সমাধানের পথ ক্ষীণ। ভারতের বিজেপির যে রাজনীতি, সেখানে নাগরিকদের একটা বড় অংশের সমর্থন আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নাগরিকদের প্রত্যাশা নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ। এর একটা চূড়ান্ত সমাধান দ্রুতই হওয়া দরকার। এতে যত বিলম্ব ঘটবে ততই এ ধরনের অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকবে। সেজন্য নাগরিকদের ভালোভাবেই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা