কাশ্মীরের পেহেলগাঁওকাণ্ডের জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় কোনও প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের ওপর দায় চাপিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তানও। এরমধ্যে অন্যতম হলো আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া। অর্থাৎ এখন থেকে পাকিস্তানের আকাশসীমায় কোনও ভারতীয় প্লেন প্রবেশ করতে পারবে না।
এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে ভারতের বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে ভারতের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে দিল্লি থেকে পশ্চিমা দেশগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইনসগুলোর জন্য কিছু ‘আবশ্যিক নির্দেশনা’ জারি করেছে ভারতের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন)।
শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এয়ারলাইনসগুলোকে যাত্রীদের চেক-ইন সময়েই জানাতে হবে যে তাদের রুট পরিবর্তন হয়েছে, ফ্লাইট সময় বেড়েছে এবং মাঝপথে জ্বালানি নেওয়ার জন্য ও ক্রু পরিবর্তনের জন্য বিরতি নিতে হতে পারে। পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা ভারতীয় উড়োজাহাজগুলোর জন্য বন্ধ করে দেওয়ায় এসব ফ্লাইটে ‘দীর্ঘ সময় এবং কারিগরি বিরতি’ লাগবে।
ডিজিসিএ-এর সিএফও ক্যাপ্টেন শ্বেতা সিং স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এ ধরনের বিরতির সময় যাত্রীদের সাধারণত বিমানেই থাকতে হবে। তাই এয়ারলাইনসগুলোকে তাদের খাবারের প্রস্তুতি নতুন করে সাজানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে পুরো যাত্রার সময় যথেষ্ট খাবার ও পানীয় মজুদ থাকে। এয়ারলাইনসগুলোকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে যে যেসব বিমানবন্দরে কারিগরি বিরতি হবে, সেগুলোতে জরুরি চিকিৎসাসেবা ও অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা থাকতে হবে।
দিল্লি, অমৃতসর, চণ্ডীগড় ও লখনউ থেকে পশ্চিমমুখী (যেমন- ইউএই, সিআইএস, ওয়েস্ট এশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর আমেরিকা) ফ্লাইট পরিচালনা করে এমন ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলো হলো- এয়ার ইন্ডিয়া গ্রুপ, ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেট। এয়ার ইন্ডিয়ার একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের উত্তর আমেরিকার নন-স্টপ ফ্লাইটগুলো কোনো কোনো দিন একটানা যেতে পারবে, আবার কখনো মাঝপথে বিরতি নিতে হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করবে প্রতিদিনের আবহাওয়া ও বিমানের ধারণক্ষমতার ওপর।
এদিকে, বিমান চলাচলের জন্য পাকিস্তানের আকাশ ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ায় ভারতে বাড়তে পারে বিমানভাড়া বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তানের ওপর দিয়ে না গেলে উত্তর ভারত থেকে পশ্চিমের দিকে বিমানগুলোকে যেতে হবে আরব সাগরের ওপর দিয়ে। এটিই প্রধান বিকল্প পথ। এছাড়া কয়েকটি বিকল্প খোলা থাকবে ভারতীয় সংস্থাগুলোর সামনে।
এক সিনিয়র পাইলট সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের বিমানগুলো বিকল্প পথ ধরলে গন্তব্যে পৌঁছতে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বেশি সময় লাগবে। তবে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন রকম বিকল্প পথ খুঁজে নিতে পারে।
আরব সাগর দিয়ে ঘুরে যেতে হলে বাড়তি জ্বালানি খরচ হবে বিমানগুলোর। এর ফলে যাত্রার খরচও আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের ফলে ভারতে বিমানভাড়া ৮ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে চলেছে। এ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে আগামী দিনে ভাড়া আরো বাড়তে পারে।
তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়। বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হলে বিমানগুলোতে আরো বেশি জ্বালানি রাখতে হবে। তার ফলে সার্বিকভাবে বিমানের ভারসাম্য বজায় রাখতে যাত্রীসংখ্যা, নয়তো জিনিসপত্রের ওজন কমাতে হবে। যাত্রীসংখ্যা কমিয়ে দিতে হলে বিমানসংস্থাগুলোর আয় কমবে। ফলে সেগুলো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।
এর আগে, ২০১৯ সালেও বালাকোটে ভারতের বিমান হামলার পর পাকিস্তান ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত তাদের আকাশসীমা বন্ধ রেখেছিল। তখন ভারতীয় এয়ারলাইনসগুলো প্রায় ৭০০ কোটি রুপি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল, যার বেশির ভাগই ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার।
বিডি-প্রতিদিন/শআ