আশি, নব্বই দশকে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শিরোপা নির্ধারিত হতো আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দিয়ে। গত দেড় দশকে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের প্রতিটি আসরে আবাহনী ও মোহামেডান মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু দুই দলের ম্যাচের ফলাফলে নির্ধারিত হয়নি শিরোপা। বসুন্ধরা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের চলতি আসরে শিরোপা নির্ধারিত হচ্ছে দুই ক্রিকেট পরাশক্তির ম্যাচ দিয়ে। আগামী ২৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। দুই দলের ম্যাচের ফলাফলের ওপর নিশ্চিত হবে লিগের শিরোপা। আবাহনী শিরোপা ধরে রাখবে, না মোহামেডান ২০০৯-১০ মৌসুমের পর শিরোপা জিতবে? ম্যাচটি আবাহনী জিতে যায়, তাহলে সমীকরণের প্রয়োজন হবে না। যদি মোহামেডান জিতে যায়, তাহলে আবাহনী ও মোহামেডানের পয়েন্ট সমান হবে। তখন রান রেট নয়, ‘হেড টু হেড’ বিচারে নির্ধারিত হবে শিরোপা। রবিন লিগের পাশাপাশি সুপার লিগের জয়ে আবাহনীকে পেছনে ফেলে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শেষ বলে গাজী ক্রিকেটার্সকে হারায় মোহামেডান। এরপর থেকেই প্রিমিয়ার ক্রিকেটের আবেদন বেড়ে যায় শতভাগ। রূপ নিয়েছে অলিখিত ফাইনালে।
মিরপুর স্টেডিয়ামে গাজী ক্রিকেটার্স প্রথম ব্যাটিংয়ে ২৩৬ রান করে। মোহামেডানের দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন দুরন্ত বোলিংয়ে ৪৯.৪ ওভারে গুটিয়ে দেয় গাজীকে। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৮০ রান করেন মুনিম শাহরিয়ার। মুস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন উভয়েই ৩টি করে উইকেট নেন। টার্গেট ২৩৭ রান। ওভার প্রতি ৪.৯২৫। আহামরি নয়। তারপরও রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচটি মোহামেডানকে জিততে হয়েছে ঘাম ঝরিয়ে। হঠাৎ করে রোমাঞ্চের দিকে হেলে পড়া ম্যাচটিতে ৬ বলে ১২ রানের প্রয়োজন দাঁড়ায় মোহামেডানের। অফ স্পিনার পারভেজ জীবন প্রথম বলটি ডট নেন। দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন সাইফুদ্দিন। স্ট্রাইকে গিয়ে স্কয়ারলেগে বাউন্ডারি মেরে দলকে ম্যাচে ফেরান নাসুম আহমেদ। ৩ বলে ৭ রানের সমীকরণ দাঁড়ায়। চতুর্থ বল ফের ডট। ২ বলে ৭ রান। ম্যাচ হেলে পড়ে গাজী ক্রিকেটার্সের দিকে। চাপের মুখে পঞ্চম বলে নাসুম ডিপ স্কয়ার লেগে ছক্কা মেরে স্কোর টাই করে। হাফ ছেড়ে বাঁচে মোহামেডান। শেষ বলে মিড-অনে ঠেলে জয়সূচক রান নিয়ে দুই হাত দুই দিকে মেলে জয়ের উচ্ছ্বাসে ছুটতে থাকেন নাসুম। ওই সিঙ্গেলে ৪ উইকেটের জয়ে শিরোপা টিকে থাকে মোহামেডানের। হেরে গেলে ২৫ এপ্রিলের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচটি পরিণত হতো আনুষ্ঠানিকতার। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের আবাহনী এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিত শিরোপা। মোহামেডানকে অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন জয় উপহার দেন ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করে। ৫৫ বলে অপরাজিত ৩০ রান ও ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন সাইফুদ্দিন।
বিকেএসপি-৪ নম্বর মাঠে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে পাত্তাই দেয়নি আবাহনী। সুপার সিক্সের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে ৭৫ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছে। প্রথম ব্যাটিংয়ে রূপগঞ্জ ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৫ রান করে। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন মেহেদি মারুফ। আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক সৈকত ১০ ওভারের স্পেলে ৪১ রানের খরচে নেন ৪ উইকেট। বাঁ হাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান নেন ৩ উইকেট। ২২৬ রানের মামুলি টার্গেট। পারভেজ হোসেন ইমন ও জিশান আলমের ২১.১ ওভারে ১১৩ রানের জুটিতে সহজ জয় তুলে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। পারভেজ ইমন ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি খেলেন দলকে জেতাতে। ৮৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার ও একটি ছক্কা। জিশান ৬৩ রান করেন ৬৯ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায়।
বিকেএসপি-৩ নম্বর মাঠে ইমরানুজ্জামানের সেঞ্চুরিতে অগ্রণী ব্যাংক ১৩৭ রানে হারিয়েছে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে। অগ্রণী ব্যাংক ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৪০ রান করে। ইমরানুজ্জমান ১২৩ রান করেন ১০৮ বলে ১৭ চার ও ২ ছক্কায়। জবাবে ২০৩ রানে অলআউট হয় গুলশান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স
৪৯.৪ ওভারে ২৩৬/১০ (মুনিম ৮০, সাদিকুর ২৬, শামসুর ৮, ওয়াসি ২২, সালমান ১৩, তাহজিবুল ৩২, পারভেজ ৩৩, শামিম ১২, আবদুল গাফফার ০, আবু হাসিম ১, সোহেল ২*; এবাদত ৯-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ১০-২-৪৬-৩, সাইফ ৯.৪-০-৪২-৩, নাসুম ৮-০-২২-০, নাবিল ৯-০-৫৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-২১-১)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব
৫০ ওভারে ২৩৭/৬ (রনি ৫৫, আনিসুল ২, তৌফিক ১৪, হৃদয় ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ৪৯, আরিফুল ১, সাইফ ৩০*, নাসুম ২১*; আবু হাসিম ১০-১-৩১-০, সোহেল ৬-০-৩১-১, শামিম ৯-০-২৯-২, আবদুল গাফফার ৭-০-৪০-০, ওয়াসি ৮-০-৪৫-২, পারভেজ ১০-০-৪৯-০)