আগামী বছরের ১ জানুয়ারি ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া এবং হালনাগাদে যুক্ত হওয়া ভোটারযোগ্য তরুণদের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ দিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা বিধিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এসব আইন-বিধির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রতি বছর ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া প্রকাশ এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। সে বিধানের পাশাপাশি নতুন বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। ওই বিধান যুক্ত হলে বছরের যে কোনো সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে নির্বাচন কমিশন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে কোনো সময় খসড়া ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারবে ইসি। বর্তমান আইন অনুযায়ী আগামী বছরের ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকা খসড়া ও ২ মার্চ চূড়ান্ত করতে হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন চাইলে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটারযোগ্যদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। তবে সেটা হালনাগাদ হিসেবে নয়, সংযুক্ত তালিকা হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, আইন সংশোধন হলে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় যুক্ত হওয়া অন্তত ৪৩ লাখ ২৭ হাজারের বেশি নতুন ভোটার আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। কেননা তখন ২ জানুয়ারি এবং ২ মার্চ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। ইসির একজন কর্মকর্তা বলছেন, ২ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর হবে, তাদের ভোটদানের সুযোগ দিতে হলে অবশ্যই ২ জানুয়ারির পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আইন সংশোধন প্রস্তাব তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’
এদিকে আগামী ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোট গ্রহণের টার্গেট রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন। চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৬ জন নতুন ভোটার নিবন্ধন হয়েছে, যা বিদ্যমান ভোটারের প্রায় ৫ শতাংশ। নতুনদের সিংহভাগই তরুণ। তাদের মধ্যে ৪৩ লাখ ২৭ হাজারই বাদ পড়া ভোটার। তাদের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তারও আগে এবং তারা সবাই ১৮ বছরের বেশি বয়সি। অর্থাৎ ভোটার হওয়ার যোগ্য। বাকিদের বয়স আগামী বছরের ১ জানুয়ারি ১৮ বছর পূর্ণ হবে। তালিকায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভোটার যুক্ত হচ্ছেন। একইভাবে ২১ লাখ ৭ হাজার মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী হালনাগাদে যুক্ত হওয়া ভোটারদের নামের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে ২ জানুয়ারি খসড়া প্রকাশ করতে হবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে ২ মার্চ। এর পরে ঘোষণা করতে হবে সংসদ নির্বাচনের তফসিল। ওই সময়ের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হলে নতুন ভোটারের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। এ ছাড়া তালিকায় চিহ্নিত হওয়া মৃত ভোটারদের নাম থেকে যাবে। এ নিয়ে আইনি জটিলতাও তৈরি হতে পারে। যদিও বর্তমান আইনে বিদ্যমান ভোটার তালিকায় নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে ইসির। তবে আইন সংশোধন হলে ১৮ বছরের বেশি বয়সের ভোটাররা যে কোনো সময় নির্বাচন হলেও তালিকায় যুক্ত হতে পারবেন। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদের ভোটদানের সুযোগ দিতে হলে ২ জানুয়ারির পরে তফসিল দিতে হবে।