সিলেটের জাফলংয়ের মতো আরেক পর্যটন কেন্দ্র ‘সাদাপাথরেও’ চলছে পাথর লুটের মহোৎসব। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও রোপওয়ে এলাকা থেকে দিনরাত চলছে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। এত দিন পাথরখেকোরা ভোলাগঞ্জস্থ রেলওয়ের সংরক্ষিত রোপওয়ে এলাকা থেকে পাথর লুট করছিল। এবার ঢলের সঙ্গে পাথর নামায় লুট শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী সাদাপাথর এলাকায়। এতে একদিকে যেমনই ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। পাথর লুট ও চাঁদাবাজি নিয়ে ওই এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। বিজিবি সদস্যরা পাথর লুটকারীদের এক হোতাকে আটক করলেও পরে তার স্বজনরা মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি মৌসুমে ভোলাগঞ্জের ধলাই নদীতে প্রথম পাহাড়ি ঢল নামে গত মঙ্গলবার। ঢলের স্রোতের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ পাথর আসে। এ সুযোগে পাথরখেকোরা রোপওয়ের সংরক্ষিত এলাকার পাশাপাশি সাদাপাথর এলাকা থেকেও শুরু করেন পাথর লুট। কয়েকশ নৌকা দিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক শুরু করেন পাথর উত্তোলন। মূলত প্রভাবশালীদের আশ্রয়েই চলছে পাথর লুটের এ মহোৎসব। ওই চক্রের সদস্যরা শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন করানোর পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি। স্থানীয় সূত্র জানায়, ভোলাগঞ্জর এলাকার কালাইরাগ, কালীবাড়ি ও উত্তর রাজনগর এলাকায় কয়েকজন যুবক প্রতি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত বুধবার বেলা ২টার দিকে কলাবাড়ি গ্রামের কয়েকজন নৌকার মাঝিকে মারধর করে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। এদিকে প্রায় ৯ মাস ধরে ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের সংরক্ষিত রোপওয়ে এলাকা খুঁড়ে পাথর লুটপাট চলছে। পাশাপশি পাথর উত্তোলনে ব্যবহার হচ্ছে ৩০-৪০টি যন্ত্র। পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত প্রতিটি যন্ত্র (সেইভ মেশিন) থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী চাঁদাবাজারা দৈনিক ১৫ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। কখনো কখনো চাঁদাবাজরা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়েও চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এভাবে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার পাথর লুট হচ্ছে ভোলাগঞ্জের রোপওয়ে ও সাদাপাথর এলাকা থেকে।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সাদাপাথর রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হবে। পাথর লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডবজিবি-৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর থেকে পাথর লুটপাটের খবর পেয়ে আমি স্থানীয় বিজিবি সদস্যদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সাদাপাথর জাতীয় সম্পদ, এটা কোনোভাবে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।