‘তাওয়াক্কুল’ মূলত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্ভর করা, ভরসা করা, আস্থা রাখা। ‘তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ’ অর্থ হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। মুমিনজীবনে তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব অপরিসীম।
কারণ তাওয়াক্কুলের সঙ্গে ঈমান ও দ্বিন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তাওয়াক্কুল দ্বিনের অর্ধেক, অন্য অর্ধেক হলো ইনাবাহ (আল্লাহর দিকে ফিরে আসা)। কেননা দ্বিন দুই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে—ইবাদত ও সাহায্য চাওয়া। ‘তাওয়াক্কুল’ হলো সাহায্য চাওয়া এবং ‘ইনাবাহ’ হলো ইবাদত।
তাওয়াক্কুল এমন একটি স্তর, যা দ্বিনের সব কাজের সঙ্গে জড়িত। এটি দ্বিনের সবচেয়ে বিস্তৃত ও পূর্ণাঙ্গ স্তর।’ (মাদারিজুস সালিকীন)
আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে আসবাব ও উপকরণ গ্রহণ করা বৈধ। কেননা আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন।
তাই আসবাব বা উপকরণ গ্রহণ করতে হবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করত, কিন্তু সঙ্গে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কিছু লোক হজে যেত, কিন্তু সঙ্গে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত, আমরা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো, তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৩০)
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘রিজিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে কোনো উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। যেমন—কোনো যানবাহনে আরোহণ করেই গন্তব্যস্থলে কেউ নিরাপদে পৌঁছে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই; বরং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।’
তাওয়াক্কুলের সুফল
আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন : কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
জান্নাতে প্রবেশের উপায় : যেসব মুমিন ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের সঙ্গে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, আল্লাহর নিষেধ করা পথ থেকে নিজেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য মহান আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে, তাদেরকে অবশ্যই আমি জান্নাতে কক্ষ বানিয়ে দেব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। কতই না উত্তম আমলকারীদের প্রতিদান! যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদের রবের ওপরই তাওয়াক্কুল করে।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৫৮-৫৯)
আত্মিক শক্তি, সাহস ও শত্রুর চক্রান্ত থেকে মুক্তি : আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল মানুষকে আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি জোগায়, যেমন শক্তি জুগিয়ে ছিল সাহাবায়ে কেরামকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় করো’, কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! অতঃপর তারা ফিরে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহসহ। কোনো মন্দ তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৩-১৭৪)
সত্যের ওপর দৃঢ় থাকা : আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল মানুষকে সত্যের ওপর দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা করো, তুমি অবশ্যই স্পষ্ট সত্যের ওপর আছ।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৭৯)
ঈমানের পূর্ণতা : আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো, যদি ঈমানদার হও।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৩)
জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া : ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)
রিজিকে বরকত : মানুষ প্রকৃত তাওয়াক্কুল অর্জন করলে পাখির মতো রিজিক পেত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল করেছে, তাদের ওপর শয়তানের কোনো ক্ষমতা নেই।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৯)
মহান আল্লাহ প্রতিটি মুমিনকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাওয়াক্কুল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিডি প্রতিদিন/মুসা