আমরা আজ মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে যেমন দেখি—নীল পানি আর সাদা মেঘে ঘেরা এক সুন্দর গ্রহ। কিন্তু এটা সবসময় এমন ছিল না। একসময় পৃথিবীর সমুদ্র ছিল নীল নয়, বরং সবুজ। সম্প্রতি ন্যাচার নামক একটি বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই জানানো হয়েছে।
গবেষকদের মতে, প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তখনো অক্সিজেন ছিল না। সেই সময় সমুদ্রের তলদেশ থেকে গরম পানির ফোয়ারার মতো বিস্ফোরণে নির্গত হতো লোহার এক ধরনের উপাদান, যাকে বলা হয় ফেরাস লোহা। এটি পানিতে মিশে সমুদ্রকে সবুজ করে তুলত।
সেই সময়ের সমুদ্রে আজকের মতো আলো প্রতিফলনের ক্ষমতা ছিল না। কারণ, অক্সিজেন না থাকায় ফেরাস লোহা সহজে গলে যেত পানিতে এবং পানির রঙ বদলে যেত। তবে পরে যখন সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামের এক ধরনের প্রাচীন জীবের উদ্ভব হয়, তখন তারা সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিতে শিখে যায়—এই প্রক্রিয়াই হচ্ছে ফটোসিনথেসিস। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে ধীরে ধীরে অক্সিজেন আসতে শুরু করে।
এই অক্সিজেন ফেরাস লোহাকে রূপান্তর করে ফেরিক লোহায়, যা পানিতে গলে না এবং মরিচার মতো জমে থাকে। এই লোহা পানির মধ্যে ভেসে থেকে লাল ও নীল রঙের আলো শোষণ করে, আর সবুজ আলো প্রতিফলিত করে। তাই সে সময় পৃথিবীর সমুদ্রগুলো সবুজ দেখাত। যদি তখন ক্যামেরা থাকত, তাহলে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে মনে হতো এক টুকরো সবুজ পাথরের মতো (‘পেইল গ্রিন ডট’)।
এই ধারণা পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা আধুনিক সায়ানোব্যাকটেরিয়ার জিন পরিবর্তন করে তাদের এমনভাবে তৈরি করেন যেন তারা সবুজ আলো ব্যবহার করতে পারে। দেখা যায়, সবুজ আলোর নিচেও তারা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে যদি মহাকাশ থেকে কোনো গ্রহকে সবুজ দেখায়, তবে সেটি হতে পারে জীবনের প্রাথমিক অস্তিত্বের সম্ভাবনাময় গ্রহ। অর্থাৎ সবুজ রঙ হতে পারে প্রাণের শুরু হওয়ার ইঙ্গিত।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল