অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। ২৪ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে শিগগিরই। এই লক্ষ্যে ২২ এপ্রিল ঢাকায় চুক্তি হতে যাচ্ছে জাপানের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘পেন্টা ওশান লিমিটেড’ এবং ‘টিওএ করপোরেশন’-এর সঙ্গে। কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে প্রথম প্যাকেজের আওতায় একটি মাল্টিপারপাস ও একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ বন্দরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) কনটেইনার বহনকারী জাহাজ ভিড়তে পারবে অনায়াসে। এতে কমবে আমদানি-রপ্তানি ব্যয় ও সময়। জানা যায়, গত সরকারের আমলে হাতে নেওয়া এ প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। পরে ভূমি জটিলতাসহ নানা কারণে আরও ৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার কোটি টাকা। ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে কাজ শুরু হলেও এটি আসলে গভীর সমুদ্রবন্দর। কেননা ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ যে বন্দরে ভিড়তে পারে, সেটাকেই গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ধরা হয়। বর্তমান প্রকল্পে চ্যানেল, টার্মিনালসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম ক্রয় ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ২০২৯ সালে দুটি টার্মিনালের নির্মাণ শেষ হতে পারে। ৬ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। তাদের উপস্থিতিতে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের একার পক্ষে চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রধান সমুদ্রবন্দরের বিদ্যমান যে অবকাঠামো, তাতে সক্ষমতা আর বেশি বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নতুন বন্দর তৈরিতে নজর দিতে হয়েছে।
অপরদিকে দেশের নতুন ইকোনমিক জোনগুলো পুরোদমে চালু হলে শিল্পপণ্য আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ব্যাপক হারে বাড়বে। সে ক্ষেত্রে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর অনেকটা অপরিহার্য হয়ে পড়বে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রয়োজন হলে এ বন্দর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর পণ্য পরিবহনেও ভূমিকা রাখতে পারবে। অর্থাৎ হয়ে উঠতে পারে কলম্বো বন্দরের মতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চ্যানেলের গভীরতা কম হওয়ায় বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ মিটার গভীরতার (ড্রাফট) বড় জাহাজ আসতে পারে না। মাতারবাড়ি বন্দরে প্রাথমিক অবস্থায় ১৬ মিটার এবং পরবর্তী সময়ে ১৮ মিটার গভীরতার জাহাজ ঢুকতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যে আকারের জাহাজ আসতে পারে, তার চেয়ে ৪-৫ গুণ বড় জাহাজ এখানে ভিড়বে। শুরুতে বছরে ৬ লাখ থেকে ১১ লাখ টিইইউএস এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১৪ লাখ থেকে ৪২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে এই গভীর সমুদ্রবন্দরে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে ৩০-৩২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হচ্ছে।