সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী বউমেলা। পয়লা বৈশাখ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও তিন দিনের এ মেলার দ্বিতীয় দিনই মূল আকর্ষণ। প্রতি বছরই সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ ভবনসংলগ্ন জয়রামপুরে প্রাচীন বটবৃক্ষতলে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন জয়রামপুরের ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়প্রাঙ্গণে বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, আদি বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফলফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজার্চনা করছেন নববধূ থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বী জননীরা। তাঁদের সঙ্গে রঙিন ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি বটবৃক্ষের দিকে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়তে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীর উপস্থিতি। একে সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন।
স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা জানান, বটবৃক্ষটি আমাদের পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলার এ মেলার জন্য। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর ওড়ানো ও পাঁঠা বলি দেওয়া হয় বৃক্ষদেবতার পদতলে। স্বামী-সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে সারা বছর, সুখশান্তি কামনায় পূজার আয়োজন করেন হিন্দু নারীরা।
পূজার্চনা ছাড়াও বউমেলায় বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এ মেলায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি নানা রঙের নানা বর্ণের টেপাপুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ, ভাল্লুক, হাঁড়িপাতিল থেকে শুরু করে মন্ডা-মিঠাইয়ের পসরা বসে। মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোকপণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্নসামগ্রী।
পুরোহিত উৎপল ভট্টাচার্য জানান, শত বছর ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা ভিড় করেন সিদ্ধেশ্বরী বটতলার বউমেলায়। দুপুরে আনুষ্ঠানিকতায় পূজার্চনার মধ্য দিয়ে মেলা শুরু হয়।
বউমেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা নীলোৎপল রায় জানান, প্রতি বছর বর্ষবরণ উৎসবে সিদ্ধেশ্বরী কালীপূজার আয়োজন করা হয়।