মুরগির রোস্টের মাংস আলাদা করার পর মাথা, গলা, পাঁজর ও পাখনাসহ যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা বাজারে খাঁচা নামে পরিচিত। এটিকে লটপটিও বলা হয়। সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষের মাংসের স্বাদ মিটছে এসব হাড়ে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাংসহীন এসব হাড় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে এতে এক ধরনের স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটছে বলে দাবি পুষ্টিবিদদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম চড়া হওয়ায় এসব হাড়ের চাহিদা বাড়ে। তখন প্রতি কেজি হাড় ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। যদিও মুরগির এই হাড় ব্যবহার করা হয় মাছের খাদ্য তৈরিতে। বর্তমানে রাজধানীর রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী ও কাপ্তান বাজারসহ বেশ কিছু বাজারে এসব হাড় প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, কোনো কোনো বাজারে ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। হাড়ে মাংসের পরিমাণ সামান্য বেশি থাকলে ২০-৩০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। প্রতি কেজি গিলা-কলিজা ১৩০-১৪০ টাকা, পা কেজি ৭০ টাকা এবং ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মুরগির পাখনা। ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত রাজধানীর ভাসমান হোটেলে লটপটি হিসেবে বিক্রি হয় মুরগির হাড়। লটপটির বেশির ভাগ ক্রেতা নিম্নবিত্ত। কাপ্তান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দীন বলেন, বড় কোম্পানি ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে হাড়বিহীন মুরগির মাংস কিনেন। অবশিষ্ট যে মুরগির হাড় থাকে তা ঢাকাসহ সারা দেশে লটপটি হিসেবে বিক্রি করা হয়।
ক্রেতারা জানান, অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে মাংসহীন এসব হাড় কিনছেন তারা। ফকিরাপুল বাজারে তামান্না বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, স্বামী মাসে ১৫-১৭ হাজার টাকা আয় করেন। তাতে সংসারের খরচ মিটিয়ে প্রতিদিন মাছ-মুরগি খাওয়া সম্ভব না। মাঝে মাঝে ছেলে-মেয়ে মাংস খেতে চাইলে এসব লটপটি কিনে মাংসের স্বাদ মেটানো যায়। পুষ্টিবিদদের ভাষ্য, মাত্রাতিরিক্তভাবে মুরগির হাড় খেলে কর্মক্ষমতা হারাবে মানুষ। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আবু তোরাব এম এ রহিম বলেন, উন্নত বিশ্বে মুরগির হাড় ফিড তৈরিতে ব্যবহার হয়, যা পশু খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ তাই খাচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত মুরগির হাড় খাওয়া কর্মক্ষমতা হারানোর কারণ হতে পারে।