তারেক রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে বিএনপিকে আগলে রেখেছেন। ১৭ বছর তিনি শুধু বিএনপিকে আগলেই রাখেননি, দলটি শক্তিশালী করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাঁর ত্যাগ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এখন দেশে বিদেশে প্রশংসিত। অথচ এ তারেক রহমানকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। সাংবাদিকতার রীতিনীতিবিবর্জিতভাবে তাঁকে কুৎসিত, নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছিল প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠী। তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ বানিয়ে বিতর্কিত করার নীলনকশা বাস্তবায়নের মূলহোতা ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠী তারেক রহমানকে জড়িয়ে ষড়যন্ত্র করে। আওয়ামী লীগকে খুশি করতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার কাল্পনিক গল্প ফাঁদে। এ দুটি পত্রিকা যেভাবে ২১ আগস্টের কল্পিত কাহিনি তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল, আওয়ামী শাসনামলে গোয়েন্দারা তাঁদের তদন্ত রিপোর্টে হুবহু সেটিই কপি করেন। তারেক রহমান যেহেতু জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ধারকবাহক, তাই ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই তাঁকে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট করার বিরামহীন চেষ্টা চালায় এ গোষ্ঠী।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠীর বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে এক-এগারো আসে। একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে। তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ এবং ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এ অনির্বাচিত সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনন শুরু করে। আর এ চরিত্রহননের খেলায় মুখপাত্র ছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। এ সময় প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের ফর্মুলা অনুযায়ী শুরু হয় ‘মাইনাস ফর্মুলা’। কিন্তু দুই নেত্রীকে মাইনাস করলেই তো বিরাজনীতিকরণ করা হবে না। কারণ ২০০১ সালের নির্বাচনের থেকেই তারেক রহমান তরুণদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাজনীতিতে নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনী ভাবনার প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন। এ কারণেই প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের টার্গেট হন তারেক রহমান। প্রথম শুরু হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসিত মিথ্যাচার। তারেক রহমানকে যে তথাকথিত দুর্নীতিবাজের অপবাদ এবং তকমা লাগানো হয়েছিল সেটি ছিল প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের একটি ভয়াবহ নমুনা। বাংলাদেশে অপসাংবাদিকতার ইতিহাসে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বড় উদাহরণ। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বাংলাদেশে অপসাংবাদিকতার জনক। তিনি শুধু ‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’ এ রকম প্রতিবেদনই প্রকাশ করেননি, বরং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্বনামে মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন। ২০০৭ সালের ৭ জুন মতিউর রহমানের একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায়। শিরোনাম ছিল ‘তারেকের দুর্নীতির বিচার হতেই হবে’। ওই প্রতিবেদনে মতিউর রহমান লিখেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের একটি হলফনামার পূর্ণ বিবরণ ছাপা হয়েছে দেশের মানবজমিন পত্রিকায়। হলফনামাটিতে তারেক রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। বিলম্ব হলেও এ প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা হওয়া দরকার। প্রকাশিত হলফনামা বিবরণে বলা হচ্ছে, ‘আমি তারেক রহমান নিম্নলিখিত ঘটনার জন্য আমার পরিবার, দেশের মানুষ, জাতীয়তাবাদী দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের প্ররোচনায় তার বহু অবৈধ আয় সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েও তা থেকে বিরত হইতে নিষেধ করি নাই, যা পরোক্ষভাবে তাকে সমর্থন দেওয়া হয়। তার ‘ওয়ান গ্রুপ’-এর সকল প্রতিষ্ঠান আমাকে মৌখিকভাবে সাথে রাখে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়তে সে বিভিন্নভাবে অবৈধ আয় করে। এই অবৈধ আয় থেকে আমার, আমার রাজনৈতিক খরচের নামে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দেশে এবং বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমি তাকে বারণ করিনি।’
শুধু তাই নয়, মতিউর রহমান এ মন্তব্য প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে একজন ‘দুর্নীতির বরপুত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং দ্রুত তারেক রহমানকে আইনের আওতায় এনে তাঁর বিচার দাবি করেন। কিন্তু পরবর্তীতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ রকম কোনো হলফনামায় তারেক রহমান স্বাক্ষর করেননি। এটি ছিল তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের এক বানোয়াট চিঠি। তৎকালীন অনির্বাচিত সরকার তারেক রহমানকে নির্যাতন করেও কোনো দুর্নীতির হদিস পায়নি। এ কারণেই তারেক রহমানের স্বাক্ষর জাল করে এ ভুয়া হলফনামা তৈরি করেন তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এ হলফনামাটির লেখক মতিউর রহমান। অথচ প্রথম আলো সে রকম একটি আজগুবি বানোয়াট হলফনামার ভিত্তিতে দেশের রাজনীতির তরুণদের কণ্ঠস্বর তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ এবং তাঁকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছিল। পরে যখন প্রমাণ হয় হলফনামাটি ভুয়া, তখনো মতিউর ক্ষমা চাননি, দুঃখ প্রকাশও করেননি।
এরপর ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমানের জঙ্গি কানেকশন আবিষ্কারের চেষ্টা করে। এটি করতে চেয়ে মাইনাস ফর্মুলার জনক এ পত্রিকা দুটি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনার সঙ্গে মনগড়া গল্প রচনা করে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএনপির সঙ্গে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সম্পৃক্ততা ‘কল্পকাহিনি’ হিসেবে নাকচ করে দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলার সব আসামিকে খালাস করে দেন। অথচ প্রথম আলো ২১ আগস্টের ঘটনায় তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা প্রমাণে একের পর এক সাংবাদিকতার রীতিনীতিবিরুদ্ধ অসত্য-বানোয়াট রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২১ আগস্টের ঘটনায় প্রথম আলোর কল্পিত আবিষ্কার মুফতি হান্নান। শুধু তাই নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়ও প্রথম আলো জঙ্গিবাদ আবিষ্কার করেছিল। এ জঙ্গিবাদের ঘটনা নিয়ে বিভিন্নভাবে নানা রকম নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছিল প্রথম আলো গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, সারা দেশে জঙ্গিবাদ আবিষ্কারের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সব স্থানীয় প্রতিনিধিকে। সে নির্দেশনার অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো, যে প্রতিবেদনের মধ্যে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে পত্রিকাটি ঘোষণা করে। এ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘জঙ্গিবাদের মদদদাতা বিএনপির ৮ মন্ত্রী-সাংসদ’। বিএনপির আট মন্ত্রী-সংসদ সদস্যকে সরাসরি জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করেছিল প্রথম আলো। যাদের মধ্যে প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক। এ ছাড়া সে এলাকার জনপ্রিয় এমপি এবং সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নাদিম মোস্তফা এবং বাংলা ভাইয়ের এলাকার এমপি আবু হেনাকেও তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিহিত করেছিল। তাদের ছবিসহ সংবাদ প্রথম পৃষ্ঠায় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করে। এটি কত বড় ধরনের অপসাংবাদিকতা তা চিন্তা করলেও গা শিউরে ওঠে। সরাসরি একটি রাজনৈতিক দলের আটজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সংসদ সদস্যকে কোনোরকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়া জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করাটা একটি ভয়ংকর অপরাধ বটে। কিন্তু এ রকম ঘৃণ্য দেশবিরোধী অপরাধ করেও প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিএনপির শাসনামলে প্রথম আলো একের পর এক জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কাল্পনিক মনগড়া বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করে।
মুফতি হান্নানের বক্তব্য ‘আমি চার জোটের সমর্থক’ এ মাধ্যমে পুরো চারদলীয় জোটকেই প্রথম আলো জঙ্গি হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেছিল। পরবর্তী সময়ে এটি প্রমাণিত হয়, মুফতি হান্নানের বক্তব্য ছিল অসত্য। এটা প্রথম আলোর আরেকটি মিথ্যাচার।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপিকে জঙ্গি রাজনৈতিক দল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম আলো কী পেয়েছে? এর ফলে তারা বাংলাদেশকেই একটি ‘জঙ্গিরাষ্ট্র’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেছে। যেটি আওয়ামী লীগ বিশ্বব্যাপী প্রচার করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার সুযোগ পেয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই প্রথম আলো-ডেইলি স্টার জঙ্গি নাটকে এত আগ্রহী ছিল। আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নেই এসব করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ এনে তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল তা তৈরি করেছিলেন মতিউর রহমান এবং মাহফুজ আনাম। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে নানানরকম দুর্নীতির গালভরা মিথ্যাচার প্রথম আলো, ডেইলি স্টার লাগাতার প্রকাশ করেছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়মের তথাকথিত অভিযোগ এনে জিয়া পরিবারকে কলুষিত করা, কলঙ্কিত করার জন্য একটি নোংরা খেলায় মেতেছিল প্রথম আলো, ডেইলি স্টার। বিএনপিকে জঙ্গি প্রমাণে এ দুটি পত্রিকা তারেক রহমান এবং বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব ভিত্তিহীন মিথ্যাচার করেছে তার বিচার এখন সময়ের দাবি।