বর্ষা এলেই রাজধানীর নিত্যচিত্র হয়ে দাঁড়ায় জলজট। এর মধ্যে রাস্তা খুঁড়ে রেখে কাজ সম্পন্ন না করায় সেবা সংস্থাগুলো আরও নতুন বিপদ ডেকে আনছে। এতে আসছে বর্ষায় তৈরি হচ্ছে জলজটের আশঙ্কা। বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যেতে রাজধানীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালগুলো উদ্ধারে জোর দিচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, দুই সিটিতে ১৯টি খালের সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’। প্রথম ধাপে ছয়টি খাল সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন চারটি খাল (বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ী) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন দুটি খাল (মান্ডা ও কালুনগর)। কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে অন্য খালের সংস্কার করা হবে।
সরেজমিনে বাউনিয়া গিয়ে দেখা যায়, খাল থেকে আবর্জনা তুলে পাড়ে রাখা হয়েছে। আবর্জনার স্তূপে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল, ফ্রিজের ভাঙা অংশ ও সোফার ফোমসহ নানা জিনিসপত্র। এসব ময়লা টেনে তোলায় বেশ খানিকটা প্রশস্ত হয়েছে খাল। বেড়েছে পানির প্রবাহ। ময়লা তুলে খালের পাড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে খাল পরিষ্কার কার্যক্রম দেখছিলেন এই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘খালগুলো বদ্ধ হয়ে যাওয়ায় ড্রেনের পানি খালে যেতে পারত না। ড্রেনের ভিতরেও ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিনে ভর্তি হয়ে থাকে। ফলে বৃষ্টি হলেই ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে রাস্তা ভেসে যেত। ৩০ মিনিটের বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে যেত মিরপুরের বেশ কিছু জায়গায়। খাল, ড্রেন পরিষ্কার থাকলে জলজটের কবল থেকে বাঁচবে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় লোকবল কম। রাতের আঁধারেও আমাদের কর্মীরা কাজ করছে। কারণ আমরা বসে থাকতে নয়, পরিবর্তন আনার জন্য এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা যাবে না। কিন্তু বেশির ভাগ জায়গায় যাবে। ঢাকায় ভৌত অবকঠামো করা হয়েছে সেগুলো পরিকল্পনাবিহীন। ঢাকা সিটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু। মাঝখানে তিমি মাছের পেটের মতো। খালগুলো সব পূর্ব-পশ্চিমমুখী। দরকার ছিল ড্রেনের নেটওয়ার্ক পূর্ব-পশ্চিমমুখী করা।’
বর্ষার সময় টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, মিরপুর, শান্তিনগর, আদাবর, বিমানবন্দর সড়কে প্রতি বছর জলজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষকে। এরকম কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় জলজটের সমস্যা তৈরি হলেও স্থায়ী সমাধানে নেই উদ্যোগ। এর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা খুঁড়ে রাখায় জলজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে রাজধানীর কমলাপুর-টিটিপাড়া এলাকার রাস্তা। যাতায়াতে ভীষণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। বর্ষায় জলজটের ভয়ে এলাকাবাসীর কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। টিটিপাড়ার বাসিন্দা মহিউদ্দিন হায়দার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এ পথে যাতায়াতে ভীষণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কাজের সেরকম গতি দেখছি না। এ রাস্তায় এখনই চলার মতো অবস্থা নেই, বর্ষায় পানি জমলে বিভীষিকায় পরিণত হবে পুরো এলাকা। রাজধানীর ভাটারা এলাকার নতুন বাজার থেকে ছোলমাইদ ছাপরা মসজিদ পর্যন্ত সড়ক খুঁড়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। ছোলমাইদ এলাকার দোকানি আব্বাস আলী বলেন, ‘আধাঘণ্টা বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে হাঁটু পানি জমে যেত। এখন তো খুঁড়ে বড় গর্ত করে রাখা হয়েছে। বর্ষার আগে এগুলো ঠিক না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।