ভারতের বন্দর ব্যবহার করে গত ১৫ মাসে বিশ্বের ৩৬টি দেশে রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশের ৫ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক। প্রতি মাসে গড়ে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি টাকার পণ্য। আয়ের পরিমাণ ৪৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ থেকে ট্রাকযোগে পণ্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বিভিন্ন বন্দর এবং বিমানবন্দরের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে রপ্তানি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ভারত পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানোর সুযোগ দেয়। বেনাপোল কাস্টমসের তথ্য মতে, ২০১৮ থেকে ৬২৪টি প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা ব্যবহার করে প্রায় ৯৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ৬০৬টি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, গত বছর কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে ৪৪ হাজার টনের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। স্পেন ছিল সবচেয়ে বেশি পণ্যের গন্তব্য, যেখানে পোশাক গেছে কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে। স্পেন ছাড়াও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, চিলি, চীন, কলম্বিয়া, জার্মানি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, নেপাল, ফিলিপাইনস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সুইডেন, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারত সুবিধা বন্ধ করার আগেও ১১টি চালান গেছে কলকাতায়। কিন্তু এ সুবিধা বন্ধ হওয়ায় কিছু ট্রাক ফেরত পাঠানো হয়। এখন পুরো চাপ শাহজালাল বিমানবন্দরে পড়বে, যার জন্য বাড়তি প্রায় ৭৩০টি ফ্লাইট প্রয়োজন হবে। এতে ইউরোপ-আমেরিকার রুটে পরিবহন খরচ ও জট দুই-ই বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা বিমানবন্দরকে আরও কার্যকর করতে হবে এবং বিকল্প আন্তর্জাতিক রুট খোঁজার দিকেও নজর দিতে হবে।
ভারত হয়ে রপ্তানির বিকল্প পথ যদি কার্যকর না থাকে, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং বিকল্প রপ্তানি পথ খুঁজে বের করাই এখন সময়ের দাবি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সুবিধা পুনর্বহালের চেষ্টাও চালানো উচিত। এ ধরনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক বাণিজ্যিক আস্থার জন্য নেতিবাচক। বাংলাদেশের উচিত বিকল্প রুট ও কাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ানো। বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘ভারত একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা হতাশাজনক। এ পথটি আমাদের জন্য বিকল্প ও খরচ সাশ্রয়ী ছিল। এখন তা বন্ধ হওয়ায় রপ্তানিতে বিলম্ব ও খরচ বাড়বে।’ ‘ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হলে কিছুটা চাপ বাড়বে। তবে আমরা নতুন পথ খুঁজছি, যেমন-মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ বাড়ানো।’ গত ৯ এপ্রিল ভারত হঠাৎ করে এ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করলে ঢাকার চেয়ে প্রতি কেজিতে ৫০ সেন্ট থেকে ১ ডলার পর্যন্ত খরচ কম হতো।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতের বন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৯০৯ মেট্রিক টন পোশাক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি, বিশেষ করে নারীদের ব্লাউজ, ব্রিফস, প্যান্টি, স্কার্ট, প্যান্ট, কোট, জামাকাপড়সহ নানা ধরনের পণ্য ভারত হয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছাত। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে কটন, স্নিগ্ধতর টেক্সটাইল এবং স্যানিটারি ফাইবারের তৈরি পোশাকের একটি বিস্তৃত পরিসর। বিশেষ করে, নারীদের ও পুরুষদের পোশাকের পাশাপাশি, শিশুদের পোশাক, ট্র্যাকস্যুট, স্নিগ্ধতর পোশাক এবং আরও বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক। বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল হয়ে বিভিন্ন দেশের গন্তব্যে পণ্য পরিবহন করা হয়েছে।