চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসরে আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার ‘বাঘা’ শরীফ।
শুক্রবার সন্ধ্যার আগে কুমিল্লার আরেক বলী রাশেদকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি।
বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে এবারও ফাইনালে মুখোমুখি হন বাঘা শরীফ ও রাশেদ বলী। বিকেল ৪টায় নগরের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠের অস্থায়ী মঞ্চে শুরু হয় বলীখেলা। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ১২০ জন বলী অংশ নেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সেমিফাইনালে অংশ নেন বাঘা শরীফ, কামাল, শাহ জালাল ও রাশেদ। তারা চারজনই কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। এরমধ্যে বাঘা শরীফ ও কামালের মধ্যে প্রথম রাউন্ড খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কামালকে হারিয়ে বাঘা শরীফ বিজয়ী হন। দ্বিতীয় রাউন্ডে শাহ জালাল ও রাশেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলায় শাহজালাল পরাজিত হন। পরে দুই রাউন্ডের পরাজিত দুইজনের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কামাল বিজয়ী হন।
নিয়ম অনুযায়ী তৃতীয় রাউন্ডের বিজয়ীকে তৃতীয় এবং পরাজিতকে চতুর্থস্থান অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই অনুযায়ী কামালকে তৃতীয় এবং ১১৪তম আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল বলীকে চতুর্থস্থান অধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ বাঘা শরীফ এবং রাশেদের মধ্যে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিকাল সোয়া ৫টায় শুরু হওয়া খেলা প্রায় ৬টা পর্যন্ত চলে। এ সময় কেউ কাউকে হারাতে পারছিলেন না। পরে উভয় খেলোয়াড়কে যে মাটিতে ফেলবে তাকেই বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশনা দেন রেফারি। এ কথা শুনেই বাঘা শরীফ রাশেদকে মাটিতে ফেলে দিতে চাইলে তিনি রিংয়ের রশি ধরে ফেলেন। পরে রেফারি রাশেদকে টেকনিক্যাল আউট ঘোষণা করেন।
এর আগে খেলা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
এদিকে, বলীখেলাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। এ বৈশাখী মেলার জন্য অপেক্ষায় থাকেন চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের উপজেলার বাসিন্দারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দোকানিরা নানা ধরনের মালামাল নিয়ে আসেন এ মেলায়। এসব জিনিসপত্রে মধ্যে রয়েছে মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি, পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাব, হাত পাখা, মাছ ধরার পলো, বেতের তৈরি ডালা, কুলো, ফলদ ও বনজ গাছের চারা, ফুল গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি, মাদুর, চুড়ি, প্রসাধনী সামগ্রী, দা-বটি, ছুরিসহ প্রায় সব পণ্যই পাওয়া যায় এ মেলায়।
জব্বারের বলীখেলা ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার সওদাগরের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল জানান, বলীখেলার ১১৬তম আসরে এবার রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৪৭ জন বলী। এতে জাতীয় পর্যায়ের বলীরাও অংশ নিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এটি জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৯ সাল থেকে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রতি বছরের ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় এই জব্বারের বলীখেলা। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামি-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত