অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আলোচিত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা জানান, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার কিছুদিন আগে তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর সেখানে পরিচালিত উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। ভবন ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে রেশমা নামের একটি মেয়ে উদ্ধারের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাটক হতে পারে বলে তার ধারণা।
ড. ইউনূসকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল বিগত সরকার। এ নিয়ে সরাসরি শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবাদ করে হাসান সারওয়ার্দী বলেছিলেন, তিনি একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। এমন ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ হত্যাকারী রাষ্ট্র এবং বিশ্বের কাছে আমরা চিহ্নিত হয়ে যাব। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুমের বিষয়ে হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তাকে বলেছিলেন, ইলিয়াস আলী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সিঙ্গাপুরে মিটিং করছে। তখন তিনি বলেছিলেন, এটা ডাহা ভুয়া কথা। আপনাকে উত্তেজিত করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা বা কোনো ব্যক্তি এটা বলেছে। আপনাকে হত্যা করার জন্য ইলিয়াস আলী সিঙ্গাপুরে মিটিং করবে কেন? ঢাকায় ডাইনিং রুমে বসেও তো কথা বলা যায়। এ কথার পর উনি (শেখ হাসিনা) খুব বিরক্ত হলেন। এর কিছুদিন পর ইলিয়াস আলী হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটল। রানা প্লাজা ধসে পড়ার ঘটনা উল্লেখ করে হাসান সারওয়ার্দী বলেন, একটি চার তলা বিল্ডিংকে ৯ তলা করা হয়েছিল। বিল্ডিংয়ে ফাটল থাকায় বলা হয়েছিল সেখানে কেউ যেন কাজ না করে। কিন্তু হাজার হাজার কর্মীকে জোর করে সেখানে আনা হয়েছিল। বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শ্রমিকদের বলা হয়েছিল কেউ বের হবে না। এখান থেকে মিছিল বের হবে।
রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যখন উদ্ধারকাজ প্রায় শেষ তখন রাবিশ, লোহা পরিষ্কার করার জন্য আবদুল মোমেন লিমিটেডের ক্রেন নিয়ে আসা হয়। তাদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছিল সেনাবাহিনী। এ সময় আন্ডারগ্রাউন্ডে একটি মেয়ের সন্ধান পায় তারা। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন- সেদিন দুপুর বেলা তিনি মসজিদে ঘুমে ছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) তাকে ফোন করে বলেন- একটি মানুষ পাওয়া গেছে। যেভাবে হোক মেয়েটিকে উদ্ধার করার নির্দেশ দেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, নিচে একটি মেয়ে আটকে আছে। মেয়েটি উলঙ্গ অবস্থায় আছে। হাসান সারওয়ার্দী বলেন- তার নির্দেশে সেখানে নতুন কাপড় ও পানি পাঠানো হয়। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর মেয়েটিকে উদ্ধার করে সিএমএইচে পাঠানো হয়। হাসান সারওয়ার্দী বলেন, মেয়েটিকে যারা যেভাবে ঢুকিয়েছে এসব কাজ আর্মি করে না। এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার যারা খুন, গুম, আয়নাঘরের সঙ্গে জড়িত তারা সরকারকে খুশি করার জন্য এসব কাজ করে। প্লাজায় আহত নিহতরা কি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে? তাদের জন্য বিদেশিরা যে টাকা দিল, দেশে যে টাকা উঠল এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে গেল, সে টাকা গেল কই, খেল কে? এই টাকা শ্রমিক পায়নি বলে জানান হাসান সারওয়ার্দী। তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে তাজরীন গার্মেন্টে আগুনে ১১৮ জন মানুষ পুড়ে যায়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী এই লাশগুলোকে গুম করে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর কথা না শুনে হাসান সারওয়ার্দী বলেছিলেন আপনাকে যারা এসব বুদ্ধি দেয় তারা আপনার ভালো চায় না।