অল্প টাকায় লিবিয়া হয়ে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন। এরপর লিবিয়ার বন্দিশিবিরে আটকে রেখে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বর নামে দুই দালালের বিরুদ্ধে। মাফিয়াদের ভয়াবহ নির্যাতনের পর নিখোঁজ মাদারীপুর সদর উপজেলার হাউসদী গ্রামের তিন যুবক। এ ঘটনায় আদালতে মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে দালাল চক্র। উল্টো ভুক্তভোগীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে দালালরা। এ ঘটনায় লিবিয়ায় অবস্থানরত এক দালালের হুমকির অডিও রেকর্ড এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরে সদর উপজেলার মধ্য হাউসদী গ্রামের মারুফ হোসেন, মহিউদ্দিন মোড়ল ও সোলায়মান আকন। সবার বয়স ২০-এর মধ্যে। বাড়িতে থাকতে দালাল চক্র ওদের প্রলোভন দেখায় ইতালিতে মোটা বেতনের চাকরির। এরপর লিবিয়া নিয়ে আটকে রেখে চালায় নির্যাতন। স্বজনদের মোবাইলে শোনানো হয় নির্যাতনের বর্ণনা। টাকার জন্য লিবিয়ায় অবস্থানরত দালালরা মোবাইলে দেয় হুমকি। এরপর আদায় করা হয় টাকা। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে মানব পাচার করে থাকে। এ চক্রের সঙ্গে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসন, ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়িত।
স্বজনরা জানান, দালালের প্রলোভনে ছয় মাস আগে ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য হাউসদী গ্রামের মারুফ হোসেন, মহিউদ্দিন মোড়ল ও সোলায়মান আকন। প্রথম কিছু দিন তাদের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ থাকলেও এখন নেই। লিবিয়ায় নেওয়ার পর তাদের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এ অবস্থায় ভিটামাটি বিক্রি করার পাশাপাশি চড়া সুদে টাকা নিয়ে দালালদের হাতে তুলে দেন স্বজনরা। দালালরা লাখ লাখ টাকা আদায়ের পর দীর্ঘদিন ধরেই নেই যোগাযোগ। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তাও জানেন না স্বজনরা। এ ঘটনায় স্থানীয় দালাল হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বরের নামে ভুক্তভোগী পরিবার একাধিক মামলা করেছে। এর পরও মেলেনি সন্ধান। গ্রেপ্তার হয়নি দালাল চক্র। নিখোঁজ সোলায়মান আকনের মা সালমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপণের জন্য কয়েক দফায় বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোট পঁয়ত্রিশ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করি। এর পরও আমার ছেলের সন্ধান পাইনি। উল্টো আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় দালাল হাওয়া বেগম এবং বাবুল মাতুব্বর।’
নিখোঁজ মারুফ হোসেনের বাবা এবং অপর নিখোঁজ মহিউদ্দিন মোড়লের মামা বাবুল ফকির বলেন, স্থানীয় দালাল হাওয়া বেগম এবং বাবুল মাতুব্বর তাদের লিবিয়ায় নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপরও তাদের সন্ধান মেলেনি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাওয়া বেগম ও বাবুল মাতুব্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাদের বাড়িতে গেলে পাওয়া যায়নি। বাবুল মাতুব্বর মাদারীপুর শহরের চরমুগরিয়া বন্দর শাখা সোনালী ব্যাংকে দীর্ঘদিন থেকে কর্মরত। তবে মামলার পর অনুপস্থিত রয়েছেন সেখানেও।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সদর থানার ওসি আদিল হোসেন জানান, দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হুমকি দিয়ে থাকলেও সেটাও গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।