১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘অবুঝ দুটি মন’ ছবিটি। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত এ ছবির মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে আমিন খানের। আমিন খান ঢাকাই সিনেমায় পথচলা শুরু করেন ৩২ বছর আগে। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
৩২ বছরে চলচ্চিত্র জীবনে প্রাপ্তি কতটুকু?
চলচ্চিত্রে সুযোগ পাওয়াটা খুব সহজ ছিল না।
এ দীর্ঘ সময়ে মানুষের যে ভালোবাসা, সম্মান ও পরিচিতি পেয়েছি তার সবটুকুই আমার প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে। বেশ কয়েক বছর হলো আমি অভিনয় করি না। তার পরও মানুষ ভালোবাসে। এখনকার প্রজন্মও আমাকে চেনে। দেশ-বিদেশ যেখানেই যাই মানুষের কাছ থেকে অনেক সম্মান পাই। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।
অভিনয়ে এসে কতটা সহযোগিতা পেয়েছিলেন?
৩২ বছর আগে যখন অভিনয় শুরু করি, তারও দুই বছর আগে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম। আমি খুলনায় থাকতাম। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় আসার পর আমার এক চাচা এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ অংশ নিতে বলেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেও চলচ্চিত্রে সুযোগ পাওয়াটা খুব সহজ ছিল না।
প্রথমবার চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার গল্পটি কেমন?
আমার অভিনয়ে যুক্ত হওয়াটা খুব সহজ ছিল না। একজন পরিচালক আমাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে চাইলেন। সবকিছু চূড়ান্ত হলো। কিন্তু সিনেমার শুটিং আর হয় না। আমি হতাশ হই। ইতোমধ্যে নতুন সিনেমার অফার আসে, কিন্তু চুক্তিবদ্ধ সিনেমাটির জন্য অন্য কোনো কাজ করতে পারছিলাম না। এভাবে অপেক্ষায় দুই বছর কেটে যায়। এক দিন সাংবাদিক মিজান ভাই বলেন, আর কত অপেক্ষা করবেন? তিনি আমাকে পরিচালক মোহাম্মদ হোসেনের কাছে নিয়ে যান। ফের চুক্তি করলাম নতুন সিনেমার। এভাবেই আমার অভিনয় জীবন শুরু হয়।
অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল কোন সিনেমা?
আমার প্রথম অভিনীত ‘অবুঝ দুটি মন’ সিনেমা মুক্তি পেল। ঢাকাসহ সারা দেশে হইচই পড়ে গেল। শত শত হলে চলল। মানুষ ভিড় করল হলে। অসম্ভব ব্যবসা করল। আমার নাম জেনে গেলেন সবাই। এরপর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সিনেমা মুক্তির আগেই নতুন আরেকটি সিনেমার শুটিং শুরু করি। আসলে প্রথম সিনেমা ‘অবুঝ দুটি মন’ই অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
৩২ বছরের অভিনয় জীবন আপনার জন্য কতটা মসৃণ ছিল?
ভালোমন্দ মিলিয়েই অভিনয় জীবনের এতটা পথ হেঁটেছি। দুর্দান্ত এবং দুঃসময়, দুটিই পাড়ি দিয়েছি। সিনেমা হিট হলে যেমন লোকের অভাব হয় না, তাও দেখেছি। আবার সিনেমা ফ্লপ করলে কেউ পাশে থাকে না, তাও দেখেছি। তবে হতাশায় যখন পতিত হতাম তখনো হাল ছাড়িনি। কারও সঙ্গেই মন্দ আচরণ করিনি। আমি জানতাম ভালো ব্যবহার, বিনয়, ভালোবাসা, ইচ্ছাশক্তি দিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াব। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।
সালমান শাহ অভিনীত ‘প্রিয়জন’ সিনেমাটির নায়ক তো প্রথমে আপনিই ছিলেন?
হ্যাঁ, ‘প্রিয়জন’ সিনেমাটিতে কিছুদিন শুটিং করেছিলাম। তারপর কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বাদ দিয়ে সালমান শাহকে দিয়ে শুটিং করানো হয়। আমার শুটিংটুকু বাদ দিয়েছিলেন। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রিয়জন মুক্তি পেয়ে ফ্লপ করল। তখন ভেবেছিলাম সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কারণ, ওই সিনেমা আমার জন্য ফ্লপ করলে ক্যারিয়ারে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।