ঘরোয়া ফুটবলে মোহামেডান ও আবাহনীর ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনায় কাঁপত দেশ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ত। ইংল্যান্ডে লিভারপুল-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সোলোনার মতোই বাংলাদেশে মোহামেডান-আবাহনীর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। এখনো আছে, তবে তাদের লড়াইয়ে আগের মতো উত্তাপ বা উন্মাদনা নেই। আগে লিগ বা কোনো টুর্নামেন্টে দুই দলের খেলা ঘিরে দেশ যেন যুদ্ধে রূপান্তরিত হতো। এখন সব অতীত স্মৃতি। বর্তমান প্রজন্ম বিশ্বাস করতে চায় না দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর উন্মাদনার কথা। করবেই বা কীভাবে। মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচ কবে তার খবরই কেউ রাখে না। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দুই দলই গর্ব। শুধু সাফল্য নয়, তারকা বলতে যা বোঝায় তা সৃষ্টি হতো দুই দল থেকেই। এখন তো দুই দলের সাবেকদেরই আগ্রহ নেই ম্যাচ ঘিরে। অনেকটা নীরবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাদের লড়াই।
মোহামেডান-আবাহনী যে কী জিনিস তা অনেকদিন পর দেশ টের পেয়েছিল ২০২২-২৩ মৌসুমে। সেবার ফেডারেশন কাপে দুই দল ফাইনাল খেলেছিল। ম্যাচ হয়েছিল কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে। উপচেপড়া দর্শক সোনালি দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছিল। মিডিয়াজুড়ে সে কী আলোচনা।
সব টুর্নামেন্টেই দুই দলের লড়াইয়ের গুরুত্ব থাকত। তবে লিগ ছিল আলাদা। মোহামেডান-আবাহনী মানেই চিরচেনা শিরোপা লড়াই। মূলত শেষ ম্যাচটি হতো দুই দলের। যারা জিতত তারাই শিরোপা নিশ্চিত করত। সেই উত্তেজনার ম্যাচে শেষ দেখা হয়েছিল কবে? এ ক্ষেত্রে ২০০২ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচটি চোখে ভাসে। যে ম্যাচ ড্র করলেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। অন্যদিকে জয় ছাড়া মোহামেডানের কোনো পথ ছিল না। সেই ম্যাচেই ১-০ গোলে জয় পেয়ে মোহামেডান শেষবারের মতো লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
ভাবা যায়, যে দলের ট্রফি জেতা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেই মোহামেডান এখন পর্যন্ত পেশাদার লিগে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। অথচ তাদের ‘চির শত্রু’ আবাহনী হ্যাটট্রিকসহ ছয়বার শিরোপা জিতেছে। শুধু কী তাই, ২০১৮-১৯ মৌসুমে অভিষেকের পর বসুন্ধরা কিংস টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
শেখ জামাল ধানমন্ডি তিন, শেখ রাসেল একবার চ্যাম্পিয়ন হলেও মোহামেডানের শিরোপা জেতা হয়নি। দলটির প্রাপ্তি চারবার রানার্সআপ।
এখানেই মূলত দুই দলের লড়াইয়ের উত্তাপ ম্লান হয়ে গেছে। কেননা, আবাহনী তাদের সাফল্য ধরে রেখে চেনা পথে হাঁটলেও মোহামেডান ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি। এতটা খারাপ অবস্থা যে, মাঝেমধ্যে রেলিগেশনেরও শঙ্কা করতে হয়েছে সাদা-কালোদের।
পেশাদার লিগেই আবাহনীকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মিলিয়ে মোহামেডানের লিগ জেতার সংখ্যা যেখানে ১৯। সেখানে ১৯৭২ সালে অভিষেক হওয়া আবাহনীর শিরোপার সংখ্যা ১৭। কতটা পেছনে পড়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। যাক, অতীত ব্যর্থতা ঝেরে মোহামেডান এবার লিগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগ জেতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়েছে তারা। ১১ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে সাদা-কালোরা। সমান ম্যাচে ২৫ পয়েন্টে আাহনীর অবস্থান দুইয়ে। অনেক দিন পর ভুলে যাওয়া চেনা লড়াইয়ে দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে আজ। যদিও এটি লিগের শেষ নয়। তারপরও এটিকে চেনা শিরোপা লড়াই বলা যায়।
কুমিল্লা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডান-আবাহনী লিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লড়বে। বিকাল সাড়ে ৩টায় ম্যাচ শুরু হবে। মোহামেডান জিতলে শিরোপার রাস্তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। আবাহনী জিতলে দুই দলের ব্যবধান দাঁড়াবে মাত্র এক পয়েন্ট। তখন লড়াই আরও ভালোভাবে জেগে উঠবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, জিতবে কে আজ? মোহামেডান না আবাহনী। নাকি ড্র। কুমিল্লা আবার দুই দলের হোম ভেন্যু। প্রথম লেগে হোম ম্যাচ খেলে মোহামেডান ১-০ গোলে জয় পেয়েছিল। আজ আবার আবাহনীর হোম ম্যাচ। প্রথম লেগে আবাহনী বিদেশি ছাড়াই ৯ ম্যাচ খেলেছে। দ্বিতীয় লেগে দুই বিদেশি রাফায়েল অগাস্টো ও এমেকা যোগ দিয়েছেন। তবে মোহামেডানের চার বিদেশি অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে, সানডে, মোজাফররভ ও টনি যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে খেলছেন তা সত্যিই ভয়ংকর। অন্যদিকে রাফায়েল ও এমেকা যদি নিজেদের ঠিকমতো মেলে ধরতে পারেন তাহলে আতঙ্ক ছড়াতে পারেন।
দুই দলের প্রশিক্ষকের দায়িত্বে আছেন দুই দেশি কোচ। মোহামেডানে আলফাজ আহমেদ। অন্যদিকে আবাহনীতে মারুফুল হক। দুজনায় বলেছেন, অনেকদিন পর দুই দল চেনা চেহারায় খেলবে। এতে ম্যাচ হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উপভোগ্য। যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে। দেখা যাক, ম্যাচ শেষে কে হাসে কে কাঁদে। শিরোপার লড়াই বলেই কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গনও জাগতে পারে নতুনভাবে।