কেনিয়া থেকে বিপুলসংখ্যক পিঁপড়া চোরাচালানের চেষ্টার অভিযোগে দুই বেলজিয়ান কিশোরকে গ্রেফতার করেছে কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস (কেডব্লিউএস)। গ্রেফতারকৃতদের নাম লরনোয় ডেভিড ও সেপ লোডেভিজক্স। দু’জনেরই বয়স ১৯ বছর।
কেনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে একটি গেস্টহাউসে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ হাজার জীবন্ত পিঁপড়া জব্দ করা হয়। পিঁপড়াগুলো কাঁচের টেস্টটিউব ও সিরিঞ্জে তুলা ভরে তার ভেতর সংরক্ষিত ছিল। এই পরিবেশ মূলত সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে পিঁপড়াগুলো দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে।
গ্রেফতারকৃত দুই কিশোর আদালতে ‘ওয়াইল্ডলাইফ পাইরেসি’ বা বন্যপ্রাণী দস্যুতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন। পিঁপড়াগুলো ইউরোপ ও এশিয়ার ‘একজোটিক পেট’ বা বিদেশি পোষা প্রাণীর বাজারে পাঠানো হচ্ছিল বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ।
কেডব্লিউএস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের দৃষ্টি এখন আর শুধু গণ্ডার বা হাতির মতো আইকনিক প্রাণীর দিকে নয়, বরং কম পরিচিত, কিন্তু পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছোট ছোট জীবের প্রতিও।
এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “পিঁপড়া পাচারের ঘটনা চোরাচালানের ধারণা পরিবর্তনের ইঙ্গিত—বড় স্তন্যপায়ী থেকে কম দৃশ্যমান, কিন্তু পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির দিকে তাদের ঝোঁক বাড়ছে।”
উদ্ধার হওয়া পিঁপড়ার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘মেসর সেফালোটেস’ নামের একটি প্রজাতি, যা পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। এই প্রজাতির রানি পিঁপড়া ২০ থেকে ২৪ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয় এবং আন্তর্জাতিক একজোটিক পেট মার্কেটের ওয়েবসাইট ‘অ্যান্টস আর আস’-এ প্রতিটি কলোনির মূল্য ধরা হয়েছে ৯৯ ব্রিটিশ পাউন্ড।
এই পিঁপড়াগুলো মূলত তাদের উপনিবেশ গঠনের জটিলতা ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের জন্য পোষ্যপ্রেমীদের মধ্যে জনপ্রিয়। এদের রাখা হয় ‘ফর্মিকারিয়াম’ নামক বিশেষ নকশার কাঁচের আবাসনে। এসব পিঁপড়া পালন অনেকের কাছে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তির মাধ্যমও হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন অনলাইন ভিত্তিক বিক্রেতারা।
কেনিয়ার খ্যাতিমান কীটতত্ত্ববিদ ডিনো মার্টিনস বলেন, “এই হ্যারভেস্টার পিঁপড়েরা আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। তারা বীজ সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে এবং ছড়িয়ে দেয়। একটি বড় উপনিবেশ বছরে কয়েক কেজি পর্যন্ত ঘাসবীজ সংগ্রহ করতে পারে। পিঁপড়াগুলোর এই কাজ ঘাসভূমির পুনরুৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পিঁপড়াগুলো শুধু বাস্তুতন্ত্রেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, অন্যান্য প্রাণীর—যেমন আরডভার্ক, প্যাঙ্গোলিন ও আরডওলফের—খাদ্য হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।”
এদিকে, পিঁপড়া পাচারকে কেন্দ্র করে পরিবেশবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই ধরনের অপ্রচলিত বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হতে পারে। একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, “যেসব পিঁপড়া প্রজাতি বেশি চাহিদাসম্পন্ন, সেগুলোরই চোরাচালানের সম্ভাবনা বেশি। ফলে সেগুলো স্থানীয় পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।”
কেডব্লিউএস বলছে, এই ধরনের অবৈধ বাণিজ্য শুধু কেনিয়ার জীববৈচিত্র্যের ওপর সার্বভৌম অধিকার ক্ষুণ্ন করে না, বরং স্থানীয় জনগণ ও গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করে। সূত্র: এবিসি নিউজ, সিএনএন, ইউরো নিউজ
বিডি প্রতিদিন/একেএ