বাংলা বর্ষবরণের আনন্দের ভাগীদার হয়েছেন কারাবন্দিরাও। পান্তা-ইলিশে সকাল শুরুর পর দিনভর তাদের জন্য রাখা হয়েছে নানা আয়োজন। দুপুরে ও রাতে উন্নত খাবারের পাশাপাশি বন্দিদের অংশগ্রহণে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোভাযাত্রা, ছোট পরিসরে বৈশাখি মেলাসহ বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা স্বজনদের আপ্যায়নসহ নানান আয়োজনে বর্ষবরণ করছে দেশের কারাগারগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নববর্ষের প্রধান আয়োজন করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ)। এর বাইরেও কাশিমপুর ও কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আজ বিশেষ আয়োজন হয় বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল রবিবার কারা অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, নববর্ষ উদযাপন করতে কারাগারে দিনব্যাপী বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নববর্ষের দিন বন্দিদের জন্য সকালে থাকছে পান্তা-ইলিশ। দুপুরে উন্নতমানের খাবার ও রাতে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া, বিকেলে বন্দিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আয়োজন বড় পরিসরে থাকছে। কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগার নিজ দায়িত্বে শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া দেশের অন্য কারাগারগুলো জাতীয় শোভাযাত্রায় অংশ নেবে। দেশের সব কারাগারে পান্তা-ইলিশের ব্যবস্থা থাকছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পয়লা বৈশাখ বাঙালির একটি সর্বজনীন উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ।
এদিকে, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পাঁচ হাজার বন্দির জন্য পান্তা-ইলিশের আয়োজন করা হয়। এজন্য ব্যবস্থা করা হয় ২৫০ কেজি ইলিশ মাছের। কারা অধিদফতরের নির্দেশনায় নববর্ষের প্রথম দিন সোমবার সকালে বন্দিদের জন্য বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের এ আয়োজন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শুধু সকালের খাবার নয়, দুপুরে বন্দিদের পরিবেশন করা হবে পোলাও, মুরগির মাংস, ডাল, পান-সুপারি ও মিষ্টি। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে কারাগারে বন্দিদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের, যাতে অংশ নিচ্ছেন কারাবন্দি শিল্পীরা এবং বাইরের সংগীতশিল্পীরাও।
অন্যদিকে, ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন ছিল এক ভিন্ন চিত্র। জেলার শাহরিয়ার আলম চৌধুরীর উদ্যোগে বন্দিদের জন্য পান্তা-ইলিশের বিশেষ আপ্যায়নের পাশাপাশি কারাগার চত্বরে আয়োজিত হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মেডিক্যাল ক্যাম্পসহ নানা কর্মসূচি। শুধু বন্দিরাই নন, নববর্ষের এই আনন্দে শামিল হয়েছিলেন কারাগারে তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসা আত্মীয়-স্বজনরাও। সকাল থেকেই কারাগারের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর।
বন্দিদের জন্য পরিবেশন করা হয় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশ। একইসঙ্গে কারাগারে আসা স্বজনদেরও পান্তা-ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জেলার শাহরিয়ার আলম চৌধুরী বলেন, ‘নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। আমরা চেয়েছি, বন্দিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা এই বিশেষ দিনে এখানে এসেছেন— তারাও এই আনন্দের অংশীদার হোন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ