পনেরোটি দেশের অংশগ্রহণে একটি কাল্পনিক নতুন মহামারীর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে দেখল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সাড়ে তিনশ’ জনেরও বেশি জরুরি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দুই দিনের একটি সিমুলেশনে অংশ নিয়েছেন, যেখানে তারা কীভাবে ‘ম্যামথপক্স’ মোকাবেলা করা হবে তা পরীক্ষা করে দেখেন।
ম্যামথপক্স হচ্ছে গুটিবসন্ত এবং মাঙ্কিক্সের মতো একটি উদ্ভাবিত ভাইরাস, যা আরও বেশি প্রাণঘাতী এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় কাল্পনিক এই মহামারী পরীক্ষার জন্য দু’ দিনব্যাপী একটি মহড়া বা অনুশীলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘এক্সারসাইজ পোলারিস’ নামে পরিচিত এই পরীক্ষায় দেখানো হয়, বিজ্ঞানীদের একটি দল হিমায়িত আর্কটিক টুন্ড্রায় একটি পশমী বা লোমশ ম্যামথের দেহাবশেষ আবিষ্কার করার সময় এই মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটে।
অনুশীলনের নথি অনুসারে, দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সরবরাহ করা তথ্যের মাধ্যমে মহামারী প্রাদুর্ভাবের প্রথম কয়েক সপ্তাহ কীভাবে মোকাবেলা করা হবে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
নথিপত্র থেকে আরও জানা যায়, “ম্যামথপক্স রোগটি গুরুতর বা তীব্র হবে। এই রোগে মৃত্যুর হার হবে মাঙ্কিপক্স ও গুটিবসন্তের মধ্যবর্তী স্তরের। রোগটি স্বল্প সংক্রমিত এবং সামান্য উপসর্গসহ বিস্তারের ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তবে এক্ষেত্রে সার্স এবং মাঙ্কিপক্সের মতো কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।”
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- কানাডা, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, ডেনমার্ক, ইথিওপিয়া, জার্মানি, ইরাক, সৌদি আরব, মোজাম্বিক, নেপাল, পাকিস্তান, কাতার, সোমালিয়া, উগান্ডা এবং ইউক্রেন। এছাড়া আরও কিছু দেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিল।
সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের মতে, ভাইরাসের বিস্তার রোধে তারা কীভাবে তথ্য ভাগাভাগি করবে এবং সহযোগিতা করবে তা পরীক্ষা করার জন্য প্রতিটি দেশকে ‘ছোট্ট একটি ধাঁধা’ দেওয়া হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি দেশকে বলা হয়েছিল যে, একজন আর্কটিক গবেষক ‘পক্সের মতো অসুস্থতার লক্ষণ নিয়ে’ ২,৪৫০ জন যাত্রী এবং ৯৮০ জন ক্রু নিয়ে একটি ক্রুজ জাহাজে উঠেছিলেন।
মহড়ার দ্বিতীয় দিন, অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়েছিল যে রাজনীতি এবং কৌশলগত ভিন্নতার কারণে ভাইরাসের বিস্তার রোধের পরিকল্পনাগুলোকে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহড়ায় কিছু দেশ ‘কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন করেছে, সমস্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীকে নিষিদ্ধ করেছে এবং অভ্যন্তরীণ চলাচল সীমিত করেছে।
অন্যদিকে, বাকি দেশগুলো রোগ ছড়িয়ে পড়ার পন্থা সনাক্তকরণ, আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে ন্যূনতম বিধিনিষেধসহ সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।
অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর কল্পিত পদক্ষেপ বিবেচনায় দেখা যায়, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় এবং গোটা বিশ্বকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোকাবেলার জন্য কঠিন পরিস্থিতি পড়তে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল, পাঁচ বছর আগে কোভিডের বাস্তব অভিজ্ঞতার পর বিশ্ব আরেকটি মহামারী মোকাবেলায় কতটা প্রস্তুত।
‘এক্সারসাইজ পোলারিস’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি কর্পস পরীক্ষার একটি পদ্ধতি, যা দেশগুলোর জরুরি কর্মীবাহিনীকে শক্তিশালী করা, সার্জ টিম এবং বিশেষজ্ঞদের মোতায়েনের সমন্বয় সাধন করা এবং দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির একটি কাঠামো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম বলেছেন, “এই অনুশীলন প্রমাণ করে যে, যখন দেশগুলো নেতৃত্ব দেয় এবং অংশীদাররা সংযুক্ত হয়, তখন বিশ্ব আরও ভালভাবে প্রস্তুত থাকে। কোনও দেশ একা পরবর্তী মহামারী মোকাবেলা করতে পারবে না। অনুশীলন পোলারিস দেখিয়ে দিচ্ছে যে, বিশ্ব সহযোগিতা কেবল প্রয়োজন নয়, এটি অপরিহার্য।” সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
বিডি প্রতিদিন/একেএ