চট্টগ্রামের মিরসরাই, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ উপকূলীয় উপজেলাগুলোর চরাঞ্চলে হাজার হাজার একর জমি অনেকটা পরিত্যক্ত ছিলো। এসব জমি ধান চাষের অনুপযোগী। শীতকালিন শাকসবজির ফলনও তেমন হতো না। তবে গত কয়েকবছরের ব্যবধানে উপকূলের এসব জমিতে তরমুজের ফলন হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও একে অপরের দেখাদেখি তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৬৬৫ একর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। তিন বছর আগে ২০২২ সালে চাষ হয় ৪২০ একর জমিতে। সে হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় তিন বছরের ব্যবধানে তরমুজের আবাদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। এবার জেলার মোট তরমুজ চাষাবাদের ৭১ শতাংশ হয়েছে মিরসরাই উপজেলার উপকূলে।
মিরসরাইয়ের কৃষকরা জানান, ২০২০ সালের পর নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মিরসরাই উপকূলের ইছাখালী ইউনিয়নে পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ শুরু করে। ফলন ভালো দেখে তিনি পরিধি বাড়াতে থাকেন। তার দেখাদেখি সুবর্ণচর ও মিরসরাইয়ে স্থানীয় কৃষকরা ২০২২ সালে ১৪৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেন। সে বছরও ফলন ভালো দেখে নতুন নতুন কৃষকরা তরমুজ চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে তা আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে শতাধিক কৃষক ইছাখালী, মঘাদিয়া, সাহেরখালী ও মায়ানী ইউনিয়নে ১ হাজার ১৮৬ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করেছেন। এসব জমিতে এখনো পর্যন্ত হিসেবে ১৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজারমূল্য শতকোটি টাকার বেশি। এর আগে এই উপজেলায় ২০২৪ সালে ৪৭৫, ২০২৩ সালে ২৭৫ ও ২০২২ সালে ১৪৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, মিরসরাই উপকূলের এসব অঞ্চলে দোআঁশ ও বেলে দোঁআশ মাটি থাকলেও এগুলোতে অতীতে চাষাবাদ হতো না। কেবল শুষ্ক মৌসুমে কিছু কৃষক ডাল চাষ করতেন। এখানকার কিছু এলাকার মাটিতে লবণাক্ততাও আছে। তবে তরমুজ গাছ কিছুটা লবণ সহিঞ্চু। একারণে এখানে তরমুজ চাষের পরিধি বাড়ছে। শুরুতে কেবল সুবর্ণচরের কৃষকরা চাষ করতেন।
এদিকে মিরসরাইয়ের মতো বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলার উপকূলেও তরমুজের চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের সমতলের রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালীসহ আরো কয়েকটি উপজেলায় তরমুজের চাষ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুচ ছোবহান জানান, তরমুজ চাষের জন্য দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি উপযুক্ত। বঙ্গোপসাগর উপকূলের আবহাওয়াও তরমুজ চাষের উপযোগী। একারণে ফলন ও চাষ বাড়ছে। সুবর্ণচরের কৃষকরা পরীক্ষামূলক চাষ শুরুর পর এটা ছড়িয়ে পড়ছে। উপক‚লীয় অঞ্চলগুলোর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হয়। এই অঞ্চলে এলাকাভেদে ব্ল্যাকবেরি, আনারকলি, গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের চাষ হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, অনেকে এককভাবে আবার অনেক কৃষক দল তৈরি করে তরমুজ চাষে বিনিয়োগ করছেন। এখানকর তরমুজ অন্য অঞ্চলের মতো বড় আকারের না হলেও ফলন ভালো হয়। খেতেও সুস্বাদু। বেশিরভাগ তরমুজ মাঝারি সাইজের হয়। আড়তদার ও পাইকাররা জমিতে গিয়ে সরাসরি তরমুজ কিনে নিয়ে যান।
মিরসরাই উপকূলে ৫ জনের দল তৈরি করে ৩৫ একর জমিতে তরমুজ চাষে ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন ইসমাইল হোসেন সুমন। তিনি বলেন, ‘এককভাবে বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য দল হিসেবে করলে ভালো হয়। আমরা ৪০ টাখ টাকার মতো খরচ করেছি। এখন তরমুজ বিক্রি শেষ দিকে। ১ কোটি টাকা বিক্রির প্রত্যাশা ছিলো। তবে ১ কোটি না হলেও কাছাকাছি পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে।’
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল