সাধারণত পবিত্র রমজান মাসে আমাদের খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের একটি পরিবর্তনসহ জীবনযাত্রারও পরিবর্তন হয়। যেহেতু রমজান মাসে খাওয়াদাওয়া আমরা শেষ করি সাহরির মাধ্যমে। সুতরাং আমাদের দাঁত ব্রাশের সময়টাও পরিবর্তন করে শেষ রাতে সাহরির পরে নিয়ে যেতে হবে। তেমনি ইফতার খাওয়ার পরও একবার দাঁত ব্রাশ করে নেওয়া ভালো, যেহেতু অন্যান্য সময় আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করি, তেমনি সারা দিন না খাওয়ার পর যখন ইফতার করি তখনো আমাদের ইফতার শেষে দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। একটি কথা মনে রাখা দরকার, যেহেতু আমরা বছরের অন্যান্য সময় সকালের খাবারের পর ও রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত অনেক কিছুই খাই, তেমনি ইফতারের পরে সাহরির আগ পর্যন্ত আমরা অনেক কিছু খাই, অতএব সময়টাকে ঠিক এভাবেই আমাদের দেখতে হবে। ইফতার বা সাহরির সময় যখনই আমরা কিছু মিষ্টি খাবার যেমন জিলাপি, রসগোল্লা বা রসমালাই খাই, তারপর যেন অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করে নিতে পারি, নতুবা মিষ্টির অংশবিশেষ শর্করাজাতীয় উপাদান দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করতে পারে, সুতরাং ইফতারি বা সাহরিতে মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন।
আর একটি বিষয়, রোজার সময় অভুক্ত থাকার কারণে মুখে অনেক সময় দুর্গন্ধ হয়, এর কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন পেটের সমস্যা থাকলে এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের জন্য মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, এ ক্ষেত্রে একজন পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে নাক-কান, গলায় নানা ধরনের প্রদাহের কারণেও এ সময় দুর্গন্ধ হতে পারে। এ ব্যাপারে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের জিহ্বার ওপর খাদ্যের প্রলেপ (অসংখ্য জীবাণুসহ) থাকে তাদের এ প্রদাহ থেকে ভলাটাইল সালফার কম্পাউন্ড তৈরি হয়, ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। অতএব দাঁত ব্রাশের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ্একটি কাজ করতে হবে, সেটি হলো প্রতিদিন দুই বেলা দাঁত ব্রাশের আগে জীবছুলার সাহায্যে জিব পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাবারের সঙ্গে অনেকেই পিঁয়াজ-রসুনও অধিক পরিমাণে গ্রহণ করে থাকেন। তাদেরও খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এবং সেই সঙ্গে টাটকা ফলমূল সালাদজাতীয় খাবারের অভ্যাস করতে হবে এবং পিঁয়াজ-রসুন খেলেও সঙ্গে সঙ্গে টুথপেস্ট এবং টুথব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
রোজার সময় যেহেতু মুখ অনেকক্ষণ সময় ধরে খালি থাকে সেহেতু সাহরির পর দাঁত ব্রাশের আগে দুটো বিষয় অবশ্যই করণীয়
রাতে সাহরির পর কুলিকুচি করে নিয়ে ডেন্টাল ফ্লসের সাহায্যে প্রতিটি দাঁতের মধ্যবর্তী অংশ থেকে সূক্ষ্ম খাদ্যকণা বের করে আনা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত ক্লোর হেক্সিডিনজাতীয় মাউথওয়াশ ব্যবহার করে (নিয়ম ২ চামচ ৩০ সেকেন্ড সময় মুখের ভিতর রেখে ফেলে দেওয়া) কুলিকুচি করা।
তৃতীয়ত একটি জীবছুলা বা Tongue Cleaner দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করা।
চতুর্থ এবং শেষ কাজটি হলো ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে অন্তত তিন-চার মিনিট সময় দাঁত ব্রাশের সাহায্যে সব পাটির দাঁতকে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলা।
রোজার সময় অনেকেরই দাঁত ব্রাশের সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। এটি বিভিন্ন করণে হতে পারে। যেমন এই সময় দাঁত ব্রাশের নিয়মানুবর্তিতা ঠিকমতো মানা হয় না, ফলে খাবার জমে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অতএব রমজান মাসে ইফতার ও সাহরির পরে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন।
ডিটামিনস্বল্পতার কারণেও (বিশেষত ভিটিমিন সি) মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে (যা রক্ত পরীক্ষায় দেখে নেওয়া সম্ভব) সুতরাং রোজার সময় ইফতারিতে প্রচুর ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবুর শরবত, জাম্বুরা, কমলালেবু, কামরাঙা, আমড়া, মাল্টা, আমলকী, আনারস, সেই সঙ্গে সালাদ যেমন গাজর, শসা, টমেটো, লেটুসপাতা ইত্যাদির সঙ্গে সালাদ ড্র্রেসিং হিসেবে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া রোগ প্রতিরোধক। মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার আরও কারণ থাকতে পারে যেমন শারীরিক অন্যান্য সমস্যা, সেগুলো রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাড়িতে ও দাঁতে ডেন্টাল প্লাক জমে থাকার কারণে মাড়িতে প্রদাহ হয় (পেরিওডন্টাল ডিজিজ) সেসব ক্ষেত্রে রোজার আগে অথবা পরে একজন ডেন্টিস্টকে দিয়ে ডেন্টাল স্কেলিং করা জরুরি।
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত, ভিজিটিং প্রফেসর, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল
E-ail:[email protected]