রংপুরে অসময়ে তিস্তা নদী রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেছে। গঙ্গাচড়ায় ১০ বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। কাউনিয়ার চরের বাদাম খেত ডুবে গেছে। সামনে বর্ষা। অরক্ষিত তিস্তার দুই পারের বিস্তীর্ণ এলাকা। তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৪৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের কমপক্ষে ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কার না হলে প্রতি বছরের মতো এবারও বন্যায় দুই কূল প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর শংকরদহে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা তহর উদ্দিন, আবদুর রশীদ, ফরিদ মিয়া, আলিমুদ্দিন, রবিউল ইসলামসহ ১০ জনের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবিকার অবলম্বন ৫০ একরের ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার খেত নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙতে ভাঙতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গড়ে তোলা বালুর গ্রামরক্ষা বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্ষায় উজানের ঢলে এ বাঁধ ভেঙে গেলে তিস্তা সেতু ও রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক ভাঙনের হুমকিতে পড়বে। এ ছাড়া কাউনিয়া উপজেলার বেশ কিছু বাদাম খেত ডুবে গেছে। টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় বেশ কিছু বাদাম খেত তলিয়ে গেছে। কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।
কাউনিয়া কৃষি অফিসার তানিয়া আক্তার জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় ১৫ একর জমির ফসল ডুবে গেছে। তবে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। শনিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার। দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে. তিস্তা নদী নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ ১১৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ এ নদীর ৪৫ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধের কমপক্ষে ১০ পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বর্র্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব এলাকা সংস্কার করা না হলে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২০ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কার চলছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিব বলেন, তিস্তার প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব এলাকার বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।