ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ফুটবল লিগে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। প্রশ্ন হলো, দল যেখানে শিরোপা জিতেছে সেখানে বাংলাদেশ স্মরণীয় হয়ে থাকবে কেন? দলটা মোহামেডান বলেই যত কথা। ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম পুরোনো দল। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ ক্লাবের অবদান কখনো ভোলার নয়। দেশ এবং দেশের বাইরে মোহামেডানের কত যে সমর্থক তা হিসাব করা যাবে না। সেই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবই কি না দীর্ঘ ২৩ বছর লিগ শিরোপা থেকে বঞ্চিত ছিল। এর মধ্যে ফেডারেশন কাপ জিতেছে, জাতীয় লিগ, স্বাধীনতা কাপ ও সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু ২০০২ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাদা-কালোরা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি ছিল।
পেশাদার ফুটবল আবির্ভাবের পর ঢাকা আবাহনী হ্যাটট্রিকসহ সর্বোচ্চ ছয়বার আর বসুন্ধরা কিংস তো অভিষেক আসর থেকে টানা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে ইতিহাস গড়েছে। শেখ জামাল ধানমন্ডি তিন ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র পেশাদার লিগে একবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মোহামেডানের প্রাপ্তি বলতে চারবার রানার্সআপ। যে দলের শিরোপা জেতা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাদের কি রানার্সআপে মানায়। ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার পর মোহামেডানের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে যে অনেকে বলতে বাধ্য হয়েছেন, মোহামেডানের অবস্থা ওয়ান্ডারার্সের মতো করুণ হবে। ওয়ান্ডারার্স প্রথম দল যারা লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফুটবলে তাদের ছিল দুর্দান্ত দাপট। অথচ ১৯৬০ সালের পর তারা আর লিগ জিততে পারেনি। সাংগঠনিক ব্যর্থতা আর মাঠে সাফল্য ধরে রাখতে না পারায় ওয়ান্ডারার্সের জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এরা কোনো দিন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। যতই ব্যর্থতা থাকুক, মোহামেডানের যে খ্যাতি ও সুনাম তারা কি হারিয়ে যাওয়ার মতো দল? তাই প্রমাণ করল পেশাদার লিগে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়ে। মোহামেডানকে নতুন চ্যাম্পিয়ন বলাটা সত্যিই বেমানান। এবারের আগে তারা ১৯ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল আগা খান গোল্ডকাপে তিন, পূর্ব পাকিস্তান আমলে স্বাধীনতা কাপে নয়, স্বাধীনতার পর ফেডারেশন কাপে ১১, ডামফা কাপে ৪, স্বাধীনতা কাপে তিন, সুপারকাপে দুই, জাতীয় লিগে দুই, মা-মণি কাপে একবার চ্যাম্পিয়ন। ট্রফিতে ঘরভর্তি। এত ট্রফি শোকেসে রাখারও জায়গা নেই। এ মোহামেডানের সঙ্গে কারও কি তুলনা চলে?
ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দল লিভারপুলও দীর্ঘদিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারছিল না। তাই বলে কি তাদের সুনাম ও ঐতিহ্য মুছে গেছে? সব মিলিয়ে মোহামেডান ২৩ বছর লিগ শিরোপা বঞ্চিত ছিল। যেখানে পেশাদার লিগে দেড় যুগ। সমর্থকদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছিল তাদের প্রিয় দল আর কখনো লিগ জিতবে কি না। সে হতাশা মোহামেডান দূর করল ১৫ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে। গতকাল কুমিল্লায় ফর্টিসের কাছে ঢাকা আবাহনী ১-২ গোলে হেরে যাওয়ায় তিন ম্যাচ আগেই সাদা-কালোদের বিজয়ের উৎসব শুরু হয়ে যায়। আলফাজ আহমেদের প্রশিক্ষণে কী দাপুটে ফুটবলটা না খেলেছেন বিদেশি ও স্থানীয়রা মিলে। গতকাল মোহামেডান শিরোপা নিশ্চিত করে সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর চেয়ে ১০ ও কিংসের চেয়ে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে। এখনো বাকি তিন ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত পার্থক্য যে কোথায় দাঁড়ায় দেখার বিষয়।
মোহামেডান যে চ্যাম্পিয়ন হবে তা প্রথম লেগে আবাহনী ও কিংসকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে থাকায় স্পষ্ট হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণ হলো। এবার ফেডারেশন কাপ, চ্যালেঞ্জ কাপ কিছুই জেতা হয়নি। তাতে কি, লিগই তো সব। এ শিরোপার সঙ্গে অন্য ট্রফির তুলনা চলে না। শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পরই মতিঝিল পাড়ায় মোহামেডান ক্লাবে উৎসব শুরু হয়। খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা ও সমর্থকরা উৎসবে মাতোয়ারা। গভীর রাত পর্যন্ত উৎসব চলে।