অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও সচিব রেজাউল মাকছুদকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। গতকাল একই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সব ফটক ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন তারা। এতে ব্যাহত হয়েছে ডিএসসিসির সব ধরনের সেবা। এদিকে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব অবিলম্বে বুঝিয়ে না দিলে রবিবারও (আজ) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন তারা। গতকাল ‘ঢাকার সাধারণ ভোটার’ ব্যানারে নগর ভবনের সামনে তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান ও সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি পালন করেন ইশরাকের সমর্থকরা। ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তার সমর্থক ও অনুসারীরা এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন বলেন, তারা নগর ভবনে মোট ৬৫টি তালা লাগিয়েছেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কার্যত অঘোষিত ছুটি পালন করছেন। তাদের কেউ নগর ভবনে ঢুকতে পারেননি। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও অফিস রয়েছে। এখানেই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অফিস করেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কারণে এ অফিসেরও সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও তালা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রবেশ করতে পারেননি। এতে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
বেলা দেড়টার দিকে নগর ভবনের সামনে রবিবারের (আজ) কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মশিউর রহমান বলেন, আগামীকালও (আজ) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে ‘ঢাকাবাসী’।
এদিকে গতকাল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হচ্ছে। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও শপথ অনুষ্ঠানে গড়িমসি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, শপথ গ্রহণের দাবিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
ইশরাক বলেন, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে আমি বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলাম। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস প্রশাসনের সহযোগিতায় অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী হন। ভোটারবিহীন কেন্দ্রে ইভিএম দখল করে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনের পরদিন ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে, নির্বাচন কমিশন তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। এর বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনি বিধিমালার আওতায় নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তিনি ওই গেজেট বাতিল করে নিজেকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করার আবেদন জানান।
ইশরাক বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে এবং তার নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হলে, ৩০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু গেজেট প্রকাশের পর প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শপথ গ্রহণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। ১৬ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে ১০ দিনে মধ্যে গেজেট প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন আদালত। ২২ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা নিয়ে আইনগত কোনো জটিলতা আছে কি না সেই মতামত চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় নির্বাচন কমিশন। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের অপেক্ষায় থেকে নির্ধারিত ১০ দিনের ঠিক শেষ দিন ২৭ এপ্রিল রাত ৯টায় আইন মন্ত্রণালয়ের মৌখিক অনুমতি নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ২৮ এপ্রিল সেই গেজেট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আবারও আপিলের জন্য পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশনে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন আপিল করবে না জানিয়ে দেয়। তারও প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও শপথের ব্যবস্থা করছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।