ঈদুল আজহার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কোরবানির পশু। বর্তমানে কোরবানির সেই পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর ছোট-বড় খামারিরা। ক্রেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে খামারিরা প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজাকরণ করছেন গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। খামারিদের বাঁচাতে গরু আমদানি না করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে খামারিরা। ঈদুল আজহায় স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ৩৮ হাজার ৫৭৩টি খামারি তাদের গবাদিপশু প্রস্তুত করেছেন। স্পেশাল অফার হিসেবে অনেক খামারীরা ঈদের আগে ক্রেতাদের ক্রয় করা গরু বিনামূল্যে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সার্ভিস দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। আর ক্রেতারা বাড়তি ঝামেলা এড়াতে সেই অফার গ্রহণ করে খামারেই কোরবানীর গরু কিনছেন। চলতি বছর জেলায় কোরবানীর জন্য গবাদিপশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৭টি। আর প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি গবাদিপশু। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বাড়তি গবাদিপশু চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা সরাসরি এসে নওগাঁর বিভিন্ন পশুর হাট থেকে গবাদিপশু কিনে নিয়ে যায়। এবারের কোরবানির গরুগুলো খামারে ৫০০-৫৫০ টাকা দরে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
রাণীনগর উপজেলার আরকে এগ্রো কমপ্লেক্সের খামারী আসাদুজ্জামান জন বলেন, সম্পন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে তাদের খামারে এবার শাহীওয়াল, ফিজিয়ান ও দেশীজাতের শতাধিক ষাঁড় মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তবে প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক ভাবে পশু মোটাতাজাকরণের সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আসন্ন ঈদুল আযাহার হাটগুলোতে যদি গবাদিপশুর দাম ভালো পাওয়া যায় তাহলে খামারীরা বাঁচবে। আর যদি বাহিরে থেকে গরু আমদানী করা হয় তাহলে সকল শ্রেণির খামারীরা লোকসানে পড়বে। তাই খামারীদের বাঁচাতে বাহির দেশ থেকে গরু আমদানী না করতে এবং প্রতিটি পণ্যের দাম কমাতে সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন এই খামারী।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মাহফুজার রহমান বলেন, এবার স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর চার লক্ষাধিক গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকছে। যা জেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রির মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা বিক্রির আশা করা হচ্ছে। এবার যেহেতু দেশের বাহির থেকে কোন গবাদিপশু আমদানী করবে না সরকার সেহেতু জেলার ছোট-বড় সকল শ্রেণির খামারীরা গবাদিপশুর ভালো একটা দামের মাধ্যমে লাভবান হতে পারবেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে যেন কোন ঝামেলা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে নওগাঁর হাটগুলো থেকে গবাদিপশু কিনতে পারেন সেই লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ দপ্তরও একযোগে কাজ করছে।
নওগাঁর পুলিশ সুপার সাফিউল সারোয়ার বলেন, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জেলার কোন সড়ক কিংবা মহাসড়কে যেন কেউ কোন চাঁদা আদায় করতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া জেলার প্রতিটি হাটের পরিবেশ সুন্দর রাখার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি পোষাকধারী পুলিশের সঙ্গে সাদা পোষাকধারী পুলিশ সদস্যরাও পশুর হাটে দায়িত্ব পালন করবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, জেলার হাটগুলোতে যেন কেউ গবাদিপশুসহ সকল পণ্যের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে না পারে সেলক্ষ্যে সারাবছরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে কোরবানির সময় কোন চক্র যেন কোরবানীর পশু ক্রয়-বিক্রয়ে কোন ধরনের অরাজকতার সৃষ্টি করতে না পারে সেলক্ষ্যে প্রতিটি হাটে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ অভিযান আরো কঠোর করা হবে। কোরবানীর পশু ক্রয় ও বিক্রয় সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিগত সময়ের চেয়ে এবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের দল সবসময় কাজ করবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম