বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও দ্রুত বিস্তরণশীল ধর্মের নাম ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষার তথ্য খুবই চমকপ্রদ :
২০৫০ সাল নাগাদ ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীদের সংখ্যা দাঁড়াবে ২.৮ বিলিয়ন। অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে তা ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইউরোপেও মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে তা মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
ইসলামের বিস্তার ও প্রভাবের কারণ
ক) ইসলামের নীতি-আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য—ইসলামের চেয়ে আধ্যাত্মিক, উদার ও মানবিক ধর্ম আর নেই।
খ) মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার তুলনামূলকভাবে বেশি।
গ) ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামের অনুসারী হওয়ার বিপুল প্রবণতা।
জনশ্রুতি আছে—ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ায় সপ্তাহে অন্তর ৫০ জন ইসলামে দীক্ষা নেন, যাঁদের বেশির ভাগ তরুণ প্রজন্ম।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা থেকে আভাস পাওয়া যায়, ইউরোপের ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে মুসলিমের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, যে হারে বাড়ছে ইসলাম গ্রহণের ঢেউ, তাতে ওই সব দেশও একসময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হতে পারে।
বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি অবশ্যই আনন্দ সংবাদ। বলা হচ্ছে, বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বনেতৃত্ব মুসলমানদের হাতে আসতে পারে।
তবে মুসলিমদের উচিত নিজেদের ঐক্যবদ্ধ রাখা। সব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও নাশকতা মোকাবেলা করা এবং ইসলাম প্রচার, ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি মোচন ও আদর্শ স্থাপন করে ইসলামের পতাকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
প্রসঙ্গত, মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি দেশের পরিচয় তুলে ধরা যায়—
ইন্দোনেশিয়া
প্রায় এক হাজার ৭৫০টি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়ায় ২৫৭ মিলিয়ন মানুষের বাস। দেশের শতভাগ মানুষ এক ও একত্ববাদের সেতুবন্ধনে আবদ্ধ। সকাল-সন্ধ্যায় চার লক্ষাধিক মসজিদ থেকে সমস্বরে প্রচারিত হয় তাওহিদ ও রিসালাতের বার্তা।
৩০ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এশিয়ার সর্ববৃহৎ মসজিদ ‘বাইতুর রহমান’ ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত।
ওই দেশে ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে নদওয়াতুল উলামা ইন্দোনেশিয়া, কনসালটেটিভ কাউন্সিল অব ইন্দোনেশিয়া মুসলিমস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ
৬১৭ খ্রি. ১৪ রজব বৃহস্পতিবার প্রিয় নবী (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় চাঁদ দুই ভাগ হতে দেখে ‘রাজাভোজ’ মুসলমান হয়ে আবদুল্লাহ নাম ধারণ করেন। ইনিই ভারতীয় সর্বপ্রথম মুসলমান। এতে বোঝা যায়, প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় উপমহাদেশে তথা বংলাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। ওমর (রা.)-এর শাসনামলে মামুন, মুহাইমেন (রা.) নামের সাহাবিদ্বয় বাংলাদেশে আগমন করেন। এ ছাড়া উপমহাদেশে আসা সাহাবিদের মধ্যে রয়েছেন—আবদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ ওতবান, আশইয়াম বিন আমর তামিমি, মামার তামিমি প্রমুখ।
বিশিষ্ট সাহাবি আবু ওয়াক্কাস (রা.) তৃতীয় হিজরিতে ইসলাম প্রচারের জন্য চীন যাওয়ার পথে কিছু কাল রংপুর এলাকায় অবস্থান করে ইসলাম প্রচার করেন। মুসলিম চেতনায় মসজিদ স্থাপত্য বাংলাদেশে কালের সাক্ষী হয়ে আছে। রংপুরের ৪৮ কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে বড়বাড়িতে রামদাস মৌজার মসতার পাড় এলাকায় ৬৯ হিজরি বাংলাদেশের প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়।
জনসংখ্যা ও আবাসন শুমারি-২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৯১.৪ শতাংশ।
পাকিস্তান
পাকিস্তানে জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মুসলমান। বেশির ভাগ সুন্নি। লাখ লাখ মসজিদের মধ্যে শাহ ফয়সাল মসজিদ পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও জাতীয় মসজিদ।
ভারত
পিও রিচার্স সেন্টারের মতে, সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভারত আছে ২ নম্বরে। ২০৬০ সাল নাগাদ ভারতের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী হতে পারে মুসলমান। ভারতের প্রায় ১৬ শতাংশ মানুষ মুসলমান। তিন লক্ষাধিক মসজিদের মিনার ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা’র ধ্বনিতে দৈনিক পাঁচবার ধ্বনিত হয়।
মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ভারতের বুকে দাঁড়িয়ে আছে দিল্লি জামে মসজিদ, হায়াত বকশি হায়দারাবাদ, আগ্রার তাজমহল, দারুল উলুম দেওবন্দ ইত্যাদি।
বস্তুত সবাই একথা স্বীকার করেন ইসলাম মানবতা ও সাম্যের ধর্ম। এ বিষয়ে ব্যাপক চর্চা-গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। তবু যাঁরা না বুঝে বা অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হন, তাঁদের জন্য নিবেদন—
‘ওরা কাদা ছুড়ে বাধা দিবে ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ
মোরা ফুল ছুড়ে মারবো ওদের বলবো আল্লাহ জিন্দাবাদ।’
(কাজী নজরুল ইসলাম)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন