দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগ ও নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির ক্ষমতাগ্রহণ সত্ত্বেও নেপালে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। বিক্ষোভ-সহিংসতার জেরে ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে তারা অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলকে ভেঙে দেওয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের জেরে তিনি সম্প্রতি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। শনিবার দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল, মাওবাদী কেন্দ্রসহ আটটি দল অভিযোগ করেছে, প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক। এর আগে গত শুক্রবার নবনিযুক্ত অন্তর্র্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির পরামর্শে আইনসভা ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। মূলত এটি ছিল বিক্ষোভকারীদেরও প্রধান দাবি।
প্রেসিডেন্ট পাউডেল সব পক্ষকে সংযম দেখাতে এবং নির্বাচনের আয়োজন সফল করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত কঠিন ও ভীতিকর পরিস্থিতিতেও শান্তিপূর্ণ সমাধান এগিয়ে আসছে। সংবিধান টিকে আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা টিকে আছে এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রও টিকে আছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আরও কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগোনোর সুযোগ আছে।’
নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কি শনিবার কাঠমান্ডুতে শপথ নেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তির অধিকারী কার্কির নেতৃত্বকে ‘জেন জি’ আন্দোলনের নেতারাও সমর্থন জানাচ্ছেন। তবে তার সরকারকে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে- আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভাঙচুর হওয়া পার্লামেন্ট ও সরকারি ভবনগুলো পুনর্র্নির্মাণ, পরিবর্তনের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত নাগরিকদের আশ্বস্ত করা। পাশাপাশি সহিংসতার দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করাও হবে অন্যতম দায়িত্ব।
এদিকে জেন-জি বিক্ষোভ চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকে দেশের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজ বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। তিনি দোষীদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণসহ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন। এমনকি মাত্র ২৭ ঘণ্টার বিক্ষোভে যে পরিবর্তন এসেছে, তা আগে কখনো দেখেননি বলেও মন্তব্য করেছেন কার্কি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট।
অপরদিকে জেন-জি বিক্ষোভে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে নেপালের পর্যটন খাত। হোটেল ভাঙচুর, বুকিং বাতিল ও ভ্রমণ বিঘ্নে আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন বা ২৫০০ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষ। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমস। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৮-৯ তারিখের জেন-জি বিক্ষোভে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে নেপালের পর্যটন শিল্প। হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাট, যাতায়াত বিঘ্নিত হওয়া এবং বুকিং বাতিলের কারণে আনুমানিক ২৫ বিলিয়ন রুপির ক্ষতি হয়েছে। মূলত এই ক্ষতিটি হয়েছে এমন এক সময় যখন দেশটির পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার কথা ছিল। হোটেল অ্যাসোসিয়েশন নেপালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ, সহিংসতা ও অরাজকতায় দুই ডজনেরও বেশি হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা লুট হয়েছে। এর মধ্যে কাঠমান্ডুর হিলটন হোটেল একাই ৮ বিলিয়ন রুপিরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া পোখারা, ভৈরহাওয়া, বিরাটনগর ও ধনগড়ীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোও বিক্ষোভের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ধাক্কা সামলে পর্যটন খাতটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী কর্মকর্তারা।