রেলের টিকিট নিয়ে ভোগান্তি থামছেই না। টিকিট কালোবাজারি এখন কাউন্টারের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। সকাল ৮টায় ১০ দিন পরের অগ্রিম টিকিট অনলাইনে উন্মুক্ত করার দুই-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আসন ফাঁকা পাওয়া গেলেও সার্ভার জটিলতায় পেমেন্ট করা যাচ্ছে না। তবে বাড়তি টাকা দিয়ে ফেসবুকে মিলছে টিকিট। এজন্য প্রতি টিকিটের জন্য অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। টিকিট ক্রয় ও রেল ভ্রমণে যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হলেও মানা হচ্ছে না সেই নিয়ম। এই সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে টিকিট সিন্ডিকেট। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে অর্ধ শতাধিক ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে একই টিকিট টেম্পারিং করে একাধিক যাত্রীর কাছে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। আবার বিকাশে টাকা নিয়ে টিকিট না দেওয়ার ঘটনাও আছে। দিনের পর দিন এই অনিয়ম চললেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রেলওয়ে। অভিযোগ রয়েছে, খোদ রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এই টিকিট কালোবাজারি চক্রের হোতা, যার ভাগ যায় ওপর মহল পর্যন্ত। এ কারণে রেল ভ্রমণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক হলেও তা যাচাই করা হয় না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে প্রতারক চক্র টিকিট কিনে রাখে এবং পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করে। গত ২৪ অক্টোবর পরিবারসহ কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার শাহরিয়ার নাফিসের। দরকার চারটি আসন। অনলাইনে টিকিট কিনতে ১৪ অক্টোবর সকাল ৮টার আগেই রেলের ওয়েবসাইটে লগইন করে অপেক্ষা করতে থাকেন। ৮টায় টিকিট উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখেন কোথাও একসঙ্গে চারটি আসন ফাঁকা নেই। কেবিনগুলোতেও একটি-দুটি করে আসন বুক করা। টিকিট না পেয়ে ফেসবুকে টিকিটের বিজ্ঞাপন দেখে ০১৩৩৮৭৪৮৪৯৭ নম্বরে যোগাযোগ করেন। নিজেকে রেলের উপপরিচালক (চট্টগ্রাম) পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি প্রতিটি টিকিটের জন্য ১৫০ টাকা বেশি চান। তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে (০১৬২৪৭৩৪৯৭২) ৫,৮০০ টাকা পাঠান নাফিস। এরপর তিনি নাফিসের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। একই ব্যক্তির কাছ থেকে ২৯০০ টাকা দিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ২১ অক্টোবরের দুটি স্নিগ্ধা (ঙ-২৯-৩০) টিকিট ক্রয় করেছিলেন সাইফুল আলম। টিকিট নিয়ে ট্রেনে গিয়ে দেখেন একই আসনের দাবিদার আরও দুজন। তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বর টিকিটে লেখা আছে। টিকিটের ওপরে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে অন্য একজনের নম্বর পান। সেই নম্বরে ফোন দিলে তিনি জানান, তার বাড়ি রংপুর। কীভাবে তার নম্বর ট্রেনের টিকিটে গেল তা তিনি জানেন না। সাইফুলরা পরে বাসে কক্সবাজার যান। ২৪ অক্টোবর পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের এক যাত্রী জানান, টিকিটের জন্য তিনি ১৪ অক্টোবর সকাল ৮টার আগেই অনলাইনে লগইন করেন। একটা সিঙ্গেল কেবিন পেয়েছিলেন। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার শেষ ধাপ সম্পন্ন করার পর সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেয়। টাকা কেটে নিলেও টিকিট পাননি। পরে অবশ্য স্নিগ্ধায় তিনটি টিকিট কাটতে পেরেছিলেন।
শাহরিয়ার নাফিস বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় জিডি করতে চেয়েছিলাম। ব্যস্ততার কারণে শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। তবে এর পেছনে রেলওয়ে ও যে প্রতিষ্ঠান টিকিট ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত তাদের লোকজন জড়িত থাকতে পারে। ১০ দিন আগে যেখানে অনলাইনে টিকিট নেই দেখাচ্ছে, একদিন আগে হুট করে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. সুবক্তগীন ও প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানকে ফোন দিলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরিচালক (জনসংযোগ) রুবিনা পারভীনকে এসএমএস ও ফোন করলেও সাড়া দেননি।