জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে যেসব জায়গায় ঐকমত্য হবে তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি করা যাবে। জাতীয় সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতির যে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা সেদিকে অগ্রসর হতে পারব।
গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সঙ্গে সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
সকালের বৈঠকে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে দলটির আট সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, বিকালের বৈঠকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু নেতৃত্ব দেন।
প্রথম ধাপের সংলাপে আলোচনার সূচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে আলোচনা করব। বিবেচনা করব কীভাবে এক জায়গায় আসতে পারি। স্প্রেডশিটের কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হবে। তখন স্পষ্ট করতে পারব কমিশনগুলোর অবস্থান কী, আপনাদের (রাজনৈতিক দল) অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করব। তারই মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াটা অগ্রসর হবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, যত দ্রুততার সঙ্গে একটি জাতীয় সনদের জায়গায় পৌঁছানো। এ কমিশনের মেয়াদ যেহেতু জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত, তাই আমরা আশা করি, প্রাথমিক আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে শেষ করতে পারব। এরপর আমরা পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হব।
আলোচনা টেবিলের দুই পাশে হলেও দুই পক্ষ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা সবাই একপক্ষ। চেষ্টা করছি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। আমাদের লক্ষ্য এক। কিন্তু পথের ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্নতা আছে। সেটা দূর করে, যে ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনকে দূর করা গেছে, সে ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পারি এবং অগ্রসর হতে পারি। এখনো ঐক্য আছে, মতভিন্নতা আছে। সেই ঐক্যকে সুদৃঢ় করা এবং সংস্কার কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দুই পার্টির বক্তব্য অভিন্ন থাকায় আমরা তাদের একসঙ্গে বৈঠকে ডেকেছি, যাতে করে আমরা একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অনুষ্ঠান দুটি সঞ্চালনা করেন।
আওয়ামী লীগকে বাতিল করা বড় সংস্কার : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বেশির ভাগ জায়গায় এনডিএম একমত জানিয়ে সংগঠনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, সংস্কারগুলোর মাধ্যমে জনবান্ধব সরকার ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে। আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিজম যাতে বাংলাদেশে দাঁড়াতে না পারে, সেই আওয়ামী লীগকে বাতিল করা এবং তাদের ফ্যাসিজমকে বাতিল করা বড় সংস্কার।
অন্য দুই দলের বক্তব্য : বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ফ্যাসিবাদ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নতুন এক পরিস্থিতিতে প্রবেশ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা শুরুতে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন- যেসব বিষয় নিয়ে একমত হবে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আশা করি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করবে।
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ’২৪-এর গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ৫৪ বছরে দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেউই। আমরা দেখেছি, এই সময়ের শাসনকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।