অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান এবং নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চায় বাংলাদেশ ও তুরস্ক। সেই লক্ষ্যে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে বাংলাদেশের দুই উপদেষ্টার সাক্ষাতের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান এবং নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা। উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে, সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা দুই দেশের অংশীদারিকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই পক্ষের আন্তরিক আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ফলাফল আনবে বলে আশা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশকে তুরস্কের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিস্তৃত পরিসরে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে, যা সাধারণত তুরস্কের নিকটতম মিত্র দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য। এতে করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি আশাবাদী অধ্যায় রচিত করবে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি সহযোগিতা, পারস্পরিক সহায়তা এবং ভাগাভাগি দ্বার উন্মোচন করবে। উল্লেখ্য, ‘আন্টালিয়া কূটনৈতিক ফোরামে’ যোগ দিতে ১১ থেকে ১৩ এপ্রিল তুরস্ক সফর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। সফর শেষে সোমবার দেশে ফেরেন তারা।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চায় বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর : বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ২০২৬ সালের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে চায়। গত সোমবার দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত চতুর্থ যৌথ পরামর্শক সভায় এফটিএ নিয়ে উভয়পক্ষ এ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সিঙ্গাপুরের সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।
অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি লুক গো। সভায় এফটিএ চূড়ান্ত করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। উভয়পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সংযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, কৃষি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। আলোচনায় এসেছে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু।
আলোচনায় শুল্কসংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি, দ্বৈত কর পরিহারের জন্য সংশোধিত প্রটোকল, অপরাধ প্রতিরোধে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতাসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই করার বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার উন্নয়নসহ আঞ্চলিক বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক, পাটজাত পণ্য, পাদুকার মতো পণ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতি তুলে ধরেন। তিনি সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের এসব খাতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া আলোচনায় সিঙ্গাপুরকে বাংলাদেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বিশেষ করে জ্বালানি খাত, কৃষিপ্রযুক্তি ও সরঞ্জাম, চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ এবং পর্যটন অবকাঠামোতে সম্ভাব্য সহযোগিতা চান। বাংলাদেশে টেকসই জ্বালানি উৎপাদন জোরদার করার জন্য বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র তৈরিতে সিঙ্গাপুরের সহায়তা চান জসীম উদ্দিন। উভয়পক্ষ সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগসহ মানবসম্পদ উন্নয়নে ভবিষ্যতের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতি বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদার (আরসিইপি)-তে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করে।