সুস্থ জীবনের জন্য ঘুম অনিবার্য। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘুমকে নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। রাত্রিকে করেছি আবরণ।’ সুরা নাবা : ৯-১০। ঘুমে যে চোখ বন্ধ হয়, সে বন্ধ হওয়াই অনেকের জীবনের শেষ বন্ধ হওয়া হয়ে যায়। তিনি চলে যান পরকালে। সেজন্য ঘুম যেমন আল্লাহতায়ালার নিয়ামত, ঘুম থেকে জাগ্রত হতে পারাও আল্লাহতায়ালার নিয়ামত। একজন মুসলমানের ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে করণীয় বেশ কিছু সুন্নত রয়েছে।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজের পর আগে আগে ঘুমাতেন এবং শেষ রাতে আগে আগে ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন। সুতরাং সুন্নত হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশে ঘুম থেকে জেগে ওঠা। রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও নৈকট্য লাভের অনন্য সুযোগ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতে শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, ‘কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দেব। কে আছে এমন আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ সহিহ বুখারি : ১১৪৫।
চোখ খুলতে পারা আল্লাহতায়ালার দয়া। তাই জেগে উঠেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা প্রয়োজন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে দোয়ার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করতেন। হুজাইফা (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বলতেন আলহামদুলিল্লাহিল্লাযি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়াইলাইহিন নুশুর (সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং আমরা পুনরুত্থিত হয়ে তাঁরই কাছে যাব)।’ সহিহ বুখারি : ৬৩১২।
ঘুম থেকে জেগে চেহারা থেকে ঘুমের প্রভাব দূর করতে, সুরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করা ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বর্ণিত, তিনি তাঁর খালা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী মায়মুনা (রা.)-এর কাছে রাত্রি যাপন করছিলেন। তিনি বলেন, আমি বিছানার প্রস্থে শুয়েছিলাম আর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার শুয়েছিলেন বিছানার দৈর্ঘ্য।ন্ডে অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন, অর্ধরাত অতিবাহিত হওয়ার কিছু আগে বা পরে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন এবং বসলেন, তারপর চেহারা (মুবারক)-এ হাত সঞ্চালন করে ঘুমের আমেজ দূর করলেন। অতঃপর সুরা আল-ইমরানের শেষের দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। সহিহ বুখারি : ১৮৩। এরপর প্রয়োজনে প্রশ্রাব-পায়খানা করা এবং মিসওয়াক করা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে বা রাতে যখনই ঘুম থেকে উঠতেন, অজু করার আগে মিসওয়াক করতেন।’ আবু দাউদ : ৫৭। এরপর ভালোভাবে অজু করা, ২ রাকাত করে ৬ বারে ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া ভোরে ঘুম থেকে জেগে পালন করার গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন... পরে একটি ঝোলানো পুরোনো মশক বা পাত্রের দিকে দাঁড়ালেন। সেখান থেকে পানি নিয়ে অজু করলেন। অতঃপর নামাজ পড়তে দাঁড়ালেন। আমিও দাঁড়িয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো অজু করলাম। অতঃপর তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথার ওপর রাখলেন। অতঃপর তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়লেন, তারপর দুই রাকাত, আবার দুই রাকাত, আবার দুই রাকাত, আবার দুই রাকাত, আবার দুই রাকাত পড়লেন। তারপর বিতর পড়ে বিশ্রাম করলেন মুয়াজ্জিন আসা পর্যন্ত। মুয়াজ্জিন আজান দিলেন। তিনি সংক্ষিপ্ত দুই রাকাত নামাজ পড়লেন, তারপর বের হয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন।’ সহিহ বুখারি : ১৮৩।
♦ লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, গাজীপুর