নানান প্রজাতির পাখিকে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন হোটেল ব্যবসায়ী মো. জাকির হোসেন। মানুষের কোলাহল দেখে পাখি উড়ে গেলেও পাখিপ্রেমিক জাকিরের খাবারের অপেক্ষায় থাকে পাখিগুলো। খাবার না পাওয়া পর্যন্ত পাখিগুলো তার হোটেলের সামনে অপেক্ষা করে। মাটিতে খাবার ছিটিয়ে দিলেই ঝাঁকে ঝাঁকে টুনটুনি, শালিক, চড়ুই ও দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছুটে আসে। প্রথম দিকে অল্প কিছু পাখি এলেও ধীরে ধীরে শত শত পাখি খাবার খেতে আসে। খাবার খুঁজতে আসা পাখিদের দেখে তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তিনি প্রতিদিন তিন বেলা শালিক, চড়ুই ও দোয়েল পাখিদের তার হোটেলের পরোটা, পুরি, শিঙাড়া ও সমুচা এবং চানাচুর খাবার দেন। পাঁচ বছর ধরে বগুড়ার শেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আল্লাহর দান হোটেলের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন। ফলে ধীরে ধীরে পাখির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে।
জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আল্লাহর দান নামে খাবারের হোটেল ব্যবসা শুরু করেন জাকির হোসেন। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি অসহায় মানুষের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। পাখির প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে তিনি স্থানীয়দের মাঝে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন। প্রতিদিন তিনি ৮০০ থেকে হাজার টাকার খাবার পাখিদের খাইয়ে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, জাকিরের হোটেলের আশপাশে ও সড়কের ডিভাইডারে লাগানো গাছে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নিয়েছে কয়েক বছর ধরে।
টুনটুনি, শালিক, চড়ুই ও দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রাতের বেলায় আশ্রয় নেয় এবং দিনের আলো ফুটতেই কিচিরমিচির করে বেরিয়ে যায়। প্রতিদিন তিন বেলা সড়কে পাখিরা কোলাহল করে পাখিপ্রেমিক জাকিরের অপেক্ষায়। সারা দিন খাবার খেয়ে আবার চলে যায়। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম থেকে জেগে হোটেল খুলে বসেন তিনি। সকালে ঘুম ভাঙানোর দায়িত্বে থাকা পাখিদের খাবার দিলেই তারা খাবার খেয়ে উড়ে চলে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত তার দোকানে পাখিরা খাবার খেতে আসে। খাবার খুঁজতে আসা পাখিদের দেখে তার মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তিনি প্রতিদিন তিন বেলা শালিক, চড়ুই ও দোয়েল পাখিকে তার হোটেলের পরোটা, পুরি, শিঙাড়া, সমুচা এবং চানাচুর খেতে দেন। এভাবে ধীরে ধীরে পাখির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। জাকির হোসেন জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি পাখিদের অনেক ভালোবাসেন। পাঁচ বছর ধরে দেশীয় প্রজাতির পাখিদের খাবার দিয়ে আসছেন তিনি। প্রথমে অল্প কিছু পাখি আসত খাবার খেতে। পরে শত শত পাখি নিয়মিত খাবার খেতে আসছে। এসব পাখিকে প্রতিদিন নিজের বানানো পরোটা, শিঙাড়া ও সমুচা তিনবার খেতে দেই। এ ছাড়া শালিক পাখি চানাচুর বেশি খেয়ে থাকে। তাদের জন্য চানাচুর কিনে এনে খেতে দেই। পাখিদের খাবার দিতে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ থেকে হাজার টাকা খরচ হয়। তবু ভালো লাগে। কারণ, এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং তাদের উপস্থিতি তাকে মুগ্ধ করে। এতে করে মনেও এক ধরনের শান্তি মিলে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের জীবিত থাকা জরুরি। তিনি বলেন, সকালে খাবার দিতে দেরি হলে কিচিরমিচির করে। খাবারের জন্য অপেক্ষা করে। আবার খাবার দিলে খেয়ে চলে যায়। বিকালেও নীড়ে ফেরার আগে দোকানের সামনে অপেক্ষা করে। আল্লাহর দান হোটেলের কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাখিদের খাবার দেন হোটেল মালিক জাকির হোসেন। নিয়মিত খাবার দিয়ে তিনি দেশীয় জাতের বিভিন্ন পাখির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আইয়ুব আলী জানান, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পাখি। আমাদের দেশে দেশীয় প্রজাতির পাখি বিলপ্তির পথে। এর কারণ হচ্ছে পাখির প্রতি মানুষের আন্তরিকতার অভাব। তবে শেরপুর বাসট্যান্ড এলাকায় জাকিরের মতো অন্যরা খাবার খাইয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন।
যা পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে হচ্ছে। তাদের মতো প্রতিটি মানুষই যেন পশুপাখির প্রতি যত্নবান হয়ে ওঠেন। তিনি আরও বলেন, জাকির হোসেন শুধু পাখিদেরই খাওয়ান না, তিনি সুযোগ পেলে গরিব-দুঃখীদেরও বিনামূল্যে খাওয়ান। দান করেন নীরবে। তিনি কখনই তার এতসব গুণের কথা প্রচার করেননি।