সমাজমাধ্যমে নাঈম শেখ, জাকের আলি, তাসকিন আহমেদদের তুলাধুনা করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দেখতে আসা সমর্থকদের প্রতিরোধের হুমকিও দিয়েছেন তারা। জাকেরসহ অনেক ক্রিকেটারকে নিয়ে নানান ধরনের হেয়মূলক পোস্ট করা হচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়ে দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নাঈমসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে অপদস্থ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। হতাশ নাঈম তাঁর ফেসবুক ওয়ালে এ নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেন। এরপর আরও আগ্রাসি হয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। নানাভাবে ক্রিকেটারদের হেয় করছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু আজ। তার আগে মিডিয়ার মুখোমুখি হন মিরাজবাহিনীর হেড কোচ ফিল সিমন্স। মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার কোচ সরাসরি জানিয়েছেন, ‘ক্রিকেটে বর্ণবাদমূলক কোনো কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। একটি কথা বলতে চাই, ক্রিকেটারদের প্রতি কোনো ধরনের বর্ণবিদ্বেষী সুর থাকা ভালো কিছু নয়। আপনি যেখান থেকেই আসেন না কেন, আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু জাকের আলির প্রতি যা হয়েছে, সেসবে আমি ক্ষুব্ধ। ভালো কিছু নয় এসব। আপনাকে বলতে পারি, আমি চাই না আমার ক্রিকেটাররা সমাজমাধ্যমে কোনো ধরনের জবাব দেবে।’
দুই দেশের ওয়ানডে সিরিজ ট্রফি গতকাল সকালে উন্মোচিত হয় ঐতিহাসিক লালবাগ দুর্গে। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ।
আফগানিস্তানকে টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। বিধ্বস্ত হয়েছে ওয়ানডে সিরিজে। ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের পর থেকেই সমালোচনামুখর হয়ে উঠেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সমর্থকদের এমন আচরণে হতাশ ক্রিকেটাররা। তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না সমালোচনা, কিংবা হেনস্তা। এজন্যই তাঁরা হতাশা থেকে পোস্ট করছেন সমাজমাধ্যমে। গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে মিডিয়ার মুখোমুখিতে এসব বিষয় আলোচিত হয়েছে। টাইগার হেড কোচ সিমন্সও এর উত্তর দিয়েছেন, ‘আমি খুশি প্রসঙ্গটি তোলায়। প্রথমত বলতে চাই, সমাজমাধ্যমে কী হচ্ছে, এসব নিয়ে ক্রিকেটারদের কিছু করার আছে বলে আমি একদমই মনে করি না। ব্যক্তি হিসেবে সবার অধিকার আছে সমাজমাধ্যমে যা ইচ্ছা বলার। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আমার ক্রিকেটারদের অবশ্যই উচিত এসবের জবাব না দেওয়া।’ ক্রিকেট সমর্থকরা জাকের আলি অনীককে নিয়ে বর্ণবাদী কথা বলছেন। অথচ জাকেরের প্রতি প্রথম বর্ণবাদমূলক কথার শুরু করেছিলেন টাইগারদের কোচিং স্টাফের অন্যতম এক সদস্য। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাকেরকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘জাকেরের কথাটা সব সময় আপনারা ভুলে যান। কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করেন না। ছেলেটার হয়তো চেহারা একটু কালো, এ কারণে আমার মনে হয় বোর্ডও তাকে দেখে না ঠিকমতো।’ পারফরম্যান্স করার পরও জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ায় এমনটি বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিল সে সময়।
শাই হোপের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলবে আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদ নিয়ে। ক্যারিবীয়রা খেলবেন নেপালের সঙ্গে টি-২০ ও ভারতের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ হারের ধাক্কা নিয়ে। বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেহেদি মিরাজ। অ্যাওয়ে সফরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিলেন টাইগাররা। এবার ঘরের মাঠে খেলবেন। ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে সিরিজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আইসিসি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে ১০ নম্বরে। যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারে ৩-০ ব্যবধানে, তাহলে র্যাংকিংয়ে ৯ নম্বরে চলে আসবে মিরাজবাহিনী। ২০২৭ সালের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ৯ নম্বরে থাকতে হবে। সেটা ২০২৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে। এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ আট সিরিজে ২৪ ওয়ানডে খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্য যে স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট, সেখানে ফিরেছেন বাঁ হাতি ওপেনার সৌম্য সরকার। মিডল অর্ডার শক্তিশালী করতে মাইদুল ইসলাম অঙ্কন। দুই দল এখন পর্যন্ত পরস্পরের বিপক্ষে ৪৭ ওয়ানডে খেলেছে। বাংলাদেশের জয় ২১ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৪। দুটিতে কোনো ফল হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, নিজেদের প্রিয় ওয়ানডে ফরম্যাটে মিরাজের নেতৃত্বে সর্বশেষ ১০ ওয়ানডের নয়টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ।