সূর্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রবিন্দু এবং পৃথিবীতে জীবনের প্রধান উৎস। এর আলো ও তাপ ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। কিন্তু যদি কোনো এক মুহূর্তে সূর্য হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়- তবে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ ও অকল্পনীয়।
সূর্যের মহাকর্ষীয় আকর্ষণই গ্রহগুলোকে কক্ষপথে ধরে রাখে। সূর্য হঠাৎ অদৃশ্য হলে পৃথিবী আর সূর্যের চারপাশে ঘুরবে না; বরং তার বর্তমান কক্ষপথের স্পর্শক বরাবর সরলরেখায় ছুটে মহাকাশে বেরিয়ে পড়বে। চাঁদ পৃথিবীর সঙ্গে থাকলেও পুরো সৌরজগতের ভারসাম্য ভেঙে পড়বে।
তবে এই পরিবর্তন পৃথিবীবাসী সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারবে না। কারণ সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে প্রায় ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় নেয়। সেই সময় পর্যন্ত পৃথিবী উজ্জ্বল থাকবে, এরপরই আকাশ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাবে- দিন মুহূর্তে রাত্রিতে পরিণত হবে।
সূর্যের তাপ হারিয়ে গেলে তাপমাত্রা দ্রুত নামতে শুরু করবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। মহাসাগরের ওপর বরফ জমতে শুরু করবে, যদিও গভীর সমুদ্র পুরোপুরি জমে যেতে হাজার বছর লেগে যাবে। বরফের নিচে কিছুদিন তরল পানি ও জীব থাকতে পারে, তবে পৃথিবীর পৃষ্ঠতল ধীরে ধীরে এক বরফময় মৃত গ্রহে পরিণত হবে।
সূর্যের আলো না থাকায় ফটোসিন্থেসিস বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। কয়েক দিনের মধ্যেই উদ্ভিদ, তৃণভোজী, তারপর মাংসভোজী প্রাণীরা বিলুপ্ত হবে। মানুষ হয়তো কিছুদিন টিকে থাকবে কৃত্রিম আলো, তাপ ও সংরক্ষিত খাদ্যের ওপর নির্ভর করে, কিন্তু সূর্যের শক্তি ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।
তবে পৃথিবীর অন্তর্গত তাপ বিলিয়ন বছর ধরে বিদ্যমান থাকবে। সমুদ্রের তলদেশে থাকা হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের আশপাশে কিছু জীব- যারা সূর্যের আলো ছাড়াই বেঁচে থাকে- তারা কিছুদিন টিকে থাকতে পারে। ভবিষ্যতের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষও ভূগর্ভস্থ আশ্রয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করতে পারে।
অবশেষে, পৃথিবী হয়তো কোটি কোটি বছর পরে অন্য কোনো নক্ষত্রের কাছে গিয়ে তার মহাকর্ষে ধরা পড়তে পারে, তবে সেই সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। বাস্তবে সূর্য ছাড়া পৃথিবী এক ‘রোগ প্ল্যানেট’এ পরিণত হবে, যা ঠান্ডা, অন্ধকার ও নিঃসঙ্গ।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন- সূর্যের এমন অন্তর্ধান অন্তত কয়েক বিলিয়ন বছর পর্যন্ত ঘটবে না। তাই ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই; সূর্য এখনো আমাদের জীবনের আলোকস্তম্ভ হয়ে জ্বলছে।
তথ্য সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ