বিশ্বজুড়ে দূষণ ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন এক অভিনব কংক্রিট তৈরি করেছেন, যা শুধু কার্বন নির্গমন কমায় না, বরং বাতাস থেকে কার্বনও শোষণ করে নেয়। প্রকল্পটির নাম ‘ডায়ামান্টি’।
প্রকৃতির হাড়ের গঠন থেকে অনুপ্রাণিত এই কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ১০ মিটার দীর্ঘ থ্রিডি-প্রিন্টেড সেতুর নমুনা। বর্তমানে এটা ইতালির ভেনিসে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই সেতু তৈরিতে সাধারণ কংক্রিটের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। তবু এর শক্তি ও স্থায়িত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রকল্পটির নেতৃত্বে আছেন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ আখবরজাদেহ। তিনি জানান, প্রাকৃতিক হাড়ের মতোই সেতুর নকশা জালের মতো ফাঁকা রাখা হয়েছে, যাতে ভার বা ওজন নির্দিষ্ট পথে স্থানান্তরিত হয়। এতে উপকরণ কম লাগে এবং কার্বন শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
গবেষকরা ‘ফিনসলার গ্র্যাভিটি’ নামের নতুন জ্যামিতিক মডেলের মাধ্যমে এমন গঠন তৈরি করেছেন, যা কংক্রিটের পৃষ্ঠতলকে আরও ছিদ্রযুক্ত করে। ফলে বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড ভেতরে প্রবেশ করে রাসায়নিকভাবে শোষিত হয়। সাধারণ কংক্রিটের তুলনায় এই মিশ্রণ ১৪২ শতাংশ বেশি কার্বন শোষণ করতে সক্ষম।
এই বিশেষ কংক্রিটে সিমেন্টের একটি অংশের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে ডায়াটোমেসিয়াস আর্থ। এটা এক ধরনের জীবাশ্মজাত ছিদ্রযুক্ত খনিজ, যা প্রাকৃতিকভাবে সিলিকা সমৃদ্ধ। এটি কংক্রিটে ক্ষুদ্র চ্যানেল তৈরি করে, যার মাধ্যমে বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে।
‘ডায়ামান্টি’ প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান সিকা গ্রুপ, নির্মাণ কোম্পানি কারসি৩ডি ও এফাজ। তাদের সহায়তায় নির্মিত ১০ মিটার দীর্ঘ পরীক্ষামূলক সেতুটি সম্প্রতি সব ধরনের স্থায়িত্ব পরীক্ষা সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।
গবেষকদের হিসাবে, থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহারে নির্মাণ সময় ও উপকরণ খরচ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। ইস্পাতের প্রয়োজনীয়তা কমেছে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে এই পদ্ধতিতে কার্বন নিঃসরণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুদানে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এখন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পথে। গবেষকরা ইতিমধ্যে ফ্রান্সে তাদের প্রথম বাস্তব আকারের সেতু নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছেন। গবেষক আখবরজাদেহ বলেন, এটি হয়তো একক সমাধান নয়, কিন্তু ভবিষ্যতের টেকসই স্থাপত্যে নতুন এক সম্ভাবনার জগৎ খুলে দেবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল