মানবজাতির সামনে অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো আলঝেইমার রোগের নিরাময় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীরা জোর প্রতিযোগিতা নেমেছেন, ঠিক তখনই রোগটির কারণ এবং চিকিৎসা নিয়ে উঠে আসছে নতুন বিতর্ক।
আলঝেইমারের কারণ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে যে বিটা-অ্যামাইলয়েড নামক প্রোটিন ক্লাম্পকে দায়ী করা হয়। ২০০৬ সালের এ সক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়। তবে এবার দাবি করা হচ্ছে হয়তো জাল বা ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই সেই গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।২০২২ সালের জুলাই মাসে সায়েন্স ম্যাগাজিনের এমন চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সামনে আসে।
এর এক বছর আগে, ২০২১ সালের জুন মাসে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিটা-অ্যামাইলয়েডকে লক্ষ্য করে তৈরি একটি অ্যান্টিবডি অ্যাডুকানুম্যাবকে আলঝেইমারের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দেয়। যদিও এই অনুমোদনের পক্ষে থাকা তথ্য ছিল অসম্পূর্ণ এবং পরস্পরবিরোধী। এই সিদ্ধান্তের ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে দেখা দেয় চরম মতভেদ।
বিটা-অ্যামাইলয়েড চক্র থেকে মুক্তি
বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এই রহস্যময় বিটা-অ্যামাইলয়েড প্রোটিনের দলা বা ক্লাম্প গঠন প্রতিরোধ করে আলঝেইমারের নতুন চিকিৎসা উদ্ভাবনের দিকে প্রায় একচেটিয়াভাবে মনোযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ওষুধ বা থেরাপি দিতে পারেনি। ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্কের ক্রেস্বিল ব্রেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডোনাল্ড উইভারের ল্যাবরেটরি এখন আলঝেইমার নিয়ে একটি নতুন তত্ত্ব প্রদান করেছেন।
আলঝেইমার কি একটি অটোইমিউন রোগ?
অধ্যাপক উইভারের ৩০ বছরের গবেষণা বলছে, আলঝেইমারকে আর প্রাথমিকভাবে মস্তিষ্কের রোগ হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং তারা বিশ্বাস করেন যে এটি মূলত মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি ব্যাধি।
নতুন এই তত্ত্ব অনুযায়ী, বিটা-অ্যামাইলয়েড কোনো অস্বাভাবিক প্রোটিন নয় বরং এটি মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক অংশ। যা আঘাত বা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এখানেই সমস্যার সূত্রপাত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাকটেরিয়ার কোষপর্দা এবং মস্তিষ্কের কোষের পর্দার চর্বি অণুর মধ্যে আশ্চর্যজনক মিল থাকায় বিটা-অ্যামাইলয়েড আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া এবং স্বাভাবিক মস্তিষ্কের কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ফলে, এটি ভুলবশত সেই মস্তিষ্কের কোষকেই আক্রমণ করে, যাকে এটির সুরক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
এই ভুল নির্দেশিত আক্রমণের ফলে মস্তিষ্কের কোষের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে ও ক্রমাগত লোপ পেতে থাকে। যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়া। যখন মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই অঙ্গটিকে রক্ষা না করে আক্রমণ করে বসে তখন আলঝেইমার একটি অটোইমিউন রোগ হিসেবে সামনে আসে।
যদিও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো সাধারণ অটোইমিউন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রচলিত ওষুধগুলি আলঝেইমারের ক্ষেত্রে কাজ নাও করতে পারে, তবে উইভারের দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে **মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক নিয়ন্ত্রণ পথকে** লক্ষ্য করে নতুন এবং কার্যকর চিকিৎসার উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব।
সূত্র: সায়েন্স এলার্ট
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল