ডায়াবেটিস রোগের আরও একটি নতুন ধরনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষকে প্রভাবিত করছে বলে অনুমান করা হয়। এটি টাইপ ৫ ডায়াবেটিস নামে পরিচিত, যার প্রধান কারণ শৈশবকালীন দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল সম্প্রতি এর আনুষ্ঠানিক শ্রেণিবিন্যাস করেছে।
টাইপ ৫ ডায়াবেটিস, পূর্বে পুষ্টি-সম্পর্কিত ডায়াবেটিস মেলিটাস নামে পরিচিত ছিল। এটি অন্যান্য পরিচিত ডায়াবেটিসের (টাইপ ১ ও টাইপ ২) থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
এই ধরনের ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ হলো দীর্ঘ সময় ধরে সঠিক পুষ্টির অভাব। বিশেষ করে শৈশব বা কৈশোরে প্রোটিন, আয়রন এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতি থাকলে এটি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন অপুষ্টিতে ভোগার ফলে অগ্ন্যাশয়ের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এর ফলে অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই রোগটি মূলত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার মতো অঞ্চলে, যেখানে দারিদ্র্য এবং স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা প্রকট।
অন্যান্য ডায়াবেটিস থেকে পার্থক্য কোথায়?
ডায়াবেটিসের অন্যান্য সুপরিচিত ধরণগুলির থেকে টাইপ ৫-এর পার্থক্যগুলি স্পষ্ট। মূল কারণ অটোইমিউন রোগ (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে)। ইনসুলিন প্রতিরোধ (শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না) দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি।
রোগীর ওজন সাধারণত স্বাভাবিক বা কম। সাধারণত স্থূল বা অতিরিক্ত ওজনের। সাধারণত অতিরিক্ত কম ওজন। ইনসুলিন উৎপাদন প্রায় নেই। ইনসুলিন উৎপাদন কম বা স্বাভাবিক। ইনসুলিন উৎপাদন স্বল্প।
টাইপ ৫ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে সাধারণত টাইপ ১-এর মতো অটোইমিউন মার্কার বা টাইপ ২-এর মতো তীব্র ইনসুলিন প্রতিরোধের লক্ষণ দেখা যায় না। তারা ইনসুলিন ইনজেকশনে দ্রুত সাড়া দেন, যা প্রমাণ করে তাদের শরীরের কোষ ইনসুলিন গ্রহণে সক্ষম।
উপসর্গ ও চিকিৎসা পদ্ধতি
টাইপ ৫ ডায়াবেটিসের উপসর্গগুলি অন্যান্য ডায়াবেটিসের মতোই হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ও অতিরিক্ত জল পিপাসা। অত্যধিক ক্লান্তি। কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া। ক্ষত বা ঘা শুকাতে দেরি হওয়া। কম ওজনের কারণে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া।
চিকিৎসা
যেহেতু এই রোগের মূল কারণ অপুষ্টি, তাই এর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়। দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে একটি সুষম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অপরিহার্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হয়। রক্ত স্বল্পতা, ভিটামিনের ঘাটতি বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের মতো সহাবস্থানকারী সমস্যাগুলিরও চিকিৎসা করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যেহেতু আক্রান্তরা প্রায়শই অপুষ্টিতে ভোগেন, তাই ইনসুলিনের ডোজ সাবধানে নির্ধারণ করা প্রয়োজন, কারণ অত্যধিক ইনসুলিন এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যের কারণে রক্তে শর্করা বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে।
দীর্ঘকাল ধরে এই রোগটি ভুলভাবে টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস হিসেবে নির্ণীত হতো, যার ফলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পেতেন না এবং পরিণতি খারাপ হতো। গবেষকরা বলছেন, এই নতুন শ্রেণীবিন্যাস রোগের কারণ, প্রক্রিয়া এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আরও গভীর গবেষণার সুযোগ তৈরি করবে। এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বৈষম্য মোকাবিলা এবং অপুষ্টিজনিত রোগের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল