বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছে পৃথিবীর উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরগুলো। নতুন এক বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রের তাপমাত্রা এমন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে অধিকাংশ প্রবালের টিকে থাকা আর সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, আমরা হয়তো ইতোমধ্যেই অতিক্রম করেছি এক বিপজ্জনক সীমারেখা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবী এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে প্রকৃতিতে ঘটতে পারে স্থায়ী পরিবর্তন। যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও বিশ্বব্যবস্থা বিষয়ক বিজ্ঞানী টিম লেন্টন জানিয়েছেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, উষ্ণ পানির প্রবালপ্রাচীর এখন এক বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১৬০ জন বিজ্ঞানীর তৈরি করা যৌথ এই প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা শিল্পপূর্ব যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, তবে বিশ্বের অধিকাংশ প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পৃথিবীর তাপমাত্রা সেই সীমায় পৌঁছাবে।
উষ্ণ সমুদ্রের কারণে প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক রং ও খাদ্যের উৎস হারাচ্ছে। একবার যদি এরা রং হারায়, ঠান্ডা পানি না এলে আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারে না। খাবারের অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে পড়ে তারা।
২০২৩ সালের পর থেকে প্রবাল মৃত্যুর এমন মাত্রা বিজ্ঞানীরা আগে কখনো দেখেননি। প্রশান্ত, ভারত ও আটলান্টিক মহাসাগরের বিশাল প্রবালপ্রাচীর এখন রং হারিয়ে ভুতুড়ে সাদা চেহারা ধারণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবালপ্রাচীর পুরোপুরি বিলীন না হয়ে হয়তো রূপ নেবে কম বৈচিত্র্যপূর্ণ এক বাস্তুব্যবস্থায়, যেখানে অ্যালজি ও স্পঞ্জের মতো প্রাণীর আধিপত্য দেখা যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত প্রবালের কঙ্কাল ভেঙে পরিণত হবে ধ্বংসস্তূপে।
এই পরিবর্তন শুধু সামুদ্রিক প্রাণীকুল নয়, বরং প্রবালপ্রাচীরের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ ও প্রায় দশ লাখ প্রজাতির জন্যই হবে এক ভয়াবহ বিপর্যয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, এখনই যদি বিশ্ব উষ্ণতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে প্রবালপ্রাচীর হারিয়ে যেতে পারে আমাদের চোখের সামনেই। ইতিহাসে পরিণত হয়ে যাবে একসময়ের রঙিন সমুদ্রজগত।
সূত্র: এএফপি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল