ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা এখন ধ্বংসস্তুপ। গত প্রায় দুই বছরে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা, গুলি আর অবরোধে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে আছে অসংখ্য শিশু। অবরুদ্ধ এ নগরে এখন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি চললেও ত্রাণ কিংবা অন্য কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে জাতিসংঘের ত্রাণও।
এমন পরিস্থিতিতে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সংগ্রহ চলছে বাংলাদেশে। কয়েক বছর ধরে চলে আসা এ তৎপরতা সাম্প্রতিক সময়ে জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গাজাবাসীকে সহায়তা করার জন্য নগদ অর্থ তুলছে। কেউ কেউ নগদ অর্থের পরিবর্তে খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী সংগ্রহ করছে। ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ বিনা প্রশ্নেই নিজেদের অর্থ অনেক ব্যক্তি ও সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে সহায়তার নামে উত্তোলিত এ সাহায্য গাজায় আদৌ পৌঁছাচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সংগৃহীত নগদ অর্থ বা ত্রাণসহায়তা গাজায় পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অনুমোদন না নেওয়ায় এসব অর্থ অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে কি না সেটি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনুমতি ছাড়া বিদেশে টাকা পাঠান, সেটা পাচার হিসেবে চিহ্নিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে যেসব প্রতিষ্ঠান গাজায় সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে তার মধ্যে রয়েছে- মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বাসমাহ ফাউন্ডেশন, হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এইচসিএসবি), আল-আযহার জাকাত অ্যান্ড চ্যারিটি হাউস ইত্যাদি। আর অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গাজায় ত্রাণসহায়তা পাঠানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞাপন। কিছু কিছু সংগঠন তাদের ওয়েবসাইটেও সহায়তা গ্রহণের ব্যবস্থা রেখেছে। গত বছর থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ আর চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে বলে নিজেদের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাস্তুল ফাউন্ডেশন। গাজায় সহায়তার দাবি করেছে এইচসিএসবি নামের আরেকটি সংগঠনও।
সূত্র জানায়, গাজায় সহায়তার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে থাকা ইসলামী ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে জমা হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখায় জমা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকে জমা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকে জমা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপনে ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সহায়তার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ, রকেট (পার্সোনাল)-এর চারটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে (০১৭২৭-২১৬১০০, ০১৮৩৪-৮৩৭৪১২, ০১৪০৬-৯৭০৯০৭ ও ০১৬০১-৬১১১৫১)। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ মানবিক সংকটে অসহায় গাজাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর কথা জানায় মাস্তুল ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির একটি টিম মিসরে অবস্থান করছে বলেও জানানো হয়। তারা জানান, সেখান থেকে স্থানীয় ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় খাদ্যসামগ্রী প্যাকেজিং করে সরাসরি পাঠানো হচ্ছে গাজার অভ্যন্তরে। একেকটি ফুডপ্যাকের মধ্যে রয়েছে চাল, আটা, তেল, টুনা ফিশ, মসলা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনের বিশেষ পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, গাজার ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে আমাদের কোনো স্টাডি নেই। তবে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করি। দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় অবরোধ ও হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন এক হামলা করে হামাস। এরপর গাজার ওপর সর্বাত্মক বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল।