হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিস ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসে সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি টিউবওয়েল পাকা করার কাজও অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ইট ও সিমেন্টের সংখ্যা নামমাত্র ছিল, অথচ প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিখরচায় হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও চলতি বছরের মে মাসে চুনারুঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সজীব মিয়া কোন ধরনের তদারকি ছাড়াই ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এই বিল পরিশোধ করেছেন।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে চুনারুঘাটে ২৬০টি বাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৬০টি গভীর নলকূপ, ১০০টি গভীর মডিফাইড তারা নলকূপ, ৬০টি অগভীর তারা নলকূপ এবং ৪০টি গভীর সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ। কাজটি পেয়েছিল মাগুরার ঠিকাদার মোঃ মিরুল ইসলাম।
সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, নলকূপ বরাদ্দের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে না নিয়ে কর্মকর্তারা নিজেই গ্রহণ করেছেন। সাবমার্সিবল নলকূপের জন্য সরকার নির্ধারিত ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে সুবিধাভোগিদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক টিউবওয়েলের নিচের পাকাকরণের কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করেনি।
কিছু সুবিধাভোগী নিজেই ট্যাঙ্ক বসানোর চেম্বার নির্মাণ করতে হয়েছে। পশ্চিম পাকুরিয়া মাদরাসাতুল মদীনাহ’র অধ্যক্ষ মাওলানা মুনছব আলী বলেন, “মাদ্রাসায় নলকূপ বসাতে আমার ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অফিসের ইঞ্জিনিয়ার আরও ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমি নিজে ট্যাঙ্কের চেম্বার নির্মাণ করেছি। ঠিকাদার নলকূপ স্থাপনে অনিয়ম করেছে, যার কারণে পানি পরিস্কার আসে না।”
নতুন ঘরগাঁও গ্রামের নয়ন মিয়া বলেন, “আমি নিজে ছাদে ট্যাঙ্ক বসিয়েছি। অফিস থেকে আমাকে মাত্র ৫ হাজার টাকা সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে, তবে আমার খরচ এর চেয়ে বেশি।”
ঠিকাদার মিরুল ইসলাম বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি। চুনারুঘাট উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সজীব মিয়া জানান, “আমি এখানে যোগদানের আগে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে তিনি ঠিকাদারের বিল পরিশোধ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেননি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল