চার প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের পর এবার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে প্রভাবশালী ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টাসহ ছয় দেশ। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বর্তমানে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন চলছে, যেখানে গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ এবং স্থায়ী শান্তির জন্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে স্বীকৃতি দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ স্বীকৃতিগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি টার্নিং পয়েন্ট তৈরি করবে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের মাঝেই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পর্তুগাল। রবিবার পশ্চিমা বিশ্বের এই চার দেশের স্বীকৃতির পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও অন্যান্য কয়েকটি দেশও একই পথে হাঁটার কথা জানায়। এরই মধ্যে ফ্রান্স ঘোষণা করেছে, দেশটি ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের বার্ষিক সমাবেশের আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক সম্মেলনের মাধ্যমে আরও কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি দ্বিরাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে গতকাল ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে যৌথভাবে এতে সভাপতিত্ব করেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ সম্মেলন চলছিল। জানা গেছে, এ সম্মেলনেই ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা এবং সম্ভবত নিউজিল্যান্ড ও লিশটেনস্টাইন ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেবে। এর আগে জাতিসংঘ আশা প্রকাশ করে, এ শীর্ষ সম্মেলন দুটি রাষ্ট্রের দিকে জাতিসংঘের রোডম্যাপ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় নতুন গতি সঞ্চার করতে পারে। কারণ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। যদি তারা একে একে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বহু গুণে বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে মাল্টার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আগেই জানিয়েছিল, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ঘোষণা করবে ইউরোপীয় দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টা। একইভাবে ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গও জানায়, তারাও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, এখন ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে একটি আন্দোলন গড়ে উঠছে। আন্দোলনকারীরা দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান নীতিকে (ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে) এখনো প্রাসঙ্গিক হিসেবে দেখার দাবি করছেন। লুক্সেমবার্গ সরকার ওই সব দেশের দলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভোও জানান, তার দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। প্রেভো বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২টি নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করবে বেলজিয়াম। এর মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ ইসরায়েলি বসতি থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ এবং ইসরায়েলি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি ক্রয় নীতির পুনর্বিবেচনার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তিন-চতুর্থাংশই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত ১৪৫টি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। আরব বিশ্বের সব দেশ, আফ্রিকান ও লাতিন আমেরিকার প্রায় সব দেশ এবং ভারত, চীনসহ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাসহ অন্তত ৪৫টি দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। আফ্রিকায় ক্যামেরুন, লাতিন আমেরিকায় পানামা এবং ওশেনিয়ার বেশির ভাগ দেশও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি।