আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কার কার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল, কত সংখ্যক কল রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সেসব আড়ি পাতার তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা হতো সেসব তথ্য চেয়েছে নজরদারি প্রযুক্তির সংগ্রহ ও ব্যবহার পর্যালোচনা কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ওই তথ্য চাওয়া হয়েছে। ২০ আগস্ট এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর একটি বৈঠক করেছে কমিটি। বৈঠকে কাজের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া তিন মাস সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে কমিটি। এ প্রসঙ্গে পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির পর একটা বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি পরিকল্পনা ও আড়িপাতার তথ্য চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই আমরা আরও বৈঠক করব। আশা করি, তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে রিপোর্ট দিতে পারব ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা সম্ভব হবে।’
গত ২০ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকার তিন সদস্যের সমন্বয়ে নজরদারি প্রযুক্তির সংগ্রহ ও ব্যবহার পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। এতে আহ্বায়ক করা হয় প্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। কমিটি চারটি কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হচ্ছে নজরদারি প্রযুক্তি কেনার পটভূমি অনুসন্ধান করা, ওইসব প্রযুক্তির অপব্যবহার হয়েছে কি না এবং হয়ে থাকলে তার দায় দায়িত্ব নিরূপণ করা; নজরদারি সরঞ্জামাদির যৌক্তিক ব্যবহার এবং বিদ্যমান আইনসমূহের সময়োপযোগী সংশোধনের সুপারিশ এবং আর ভবিষ্যতে নজরদারি প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ফোনে আড়িপাতা নিয়ে ইতোমধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। এতে বলা হয়, আওয়ামী সরকারের আমলে ফোনে আড়িপাতার তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোথা থেকে কত টাকায় এসব যন্ত্র কেনা হয়েছে, কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে গঠিত কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নজরদারি কেবল কল রেকর্ডেই সীমাবদ্ধ ছিল না, গড়ে তোলা হয়েছিল যে কোনো ডিভাইসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কাঠামো। নজরদারির কাজে নিয়োজিত দুটি সংস্থার কথা প্রতিবেদনে উঠে আসে। একটি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। অপরটি ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন (ডিওটি)। এনটিএমসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিওটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এক বছরে দেড় লাখ ফোনকল রেকর্ড করা হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য হুমকি এমন ব্যক্তিদের ফোনকল রেকর্ড করে তা সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ফাঁস করা হয়। আর এ কাজটি করেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান।