কক্সাবাজারের টেকনাফে বিজিবি ও র্যাবের যৌথ অভিযানে অস্ত্র ও গোলা-বারুদসহ মানব পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। এ সময় নারী-শিশুসহ ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন হলরুমে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান (পিএসসি) জানান, টেকনাফের বাহারছড়ার কচ্ছপিয়া পাহাড়ে কতিপয় ব্যক্তি সাগরপথে পাচারের জন্য মানুষ জমায়েত করে জিম্মি করে রাখার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ-২ বিজিবি এবং র্যাব-১৫ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল ২১ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মানব পাচারকারী চক্রের মূল আস্তানায় অভিযান শুরু করে।
অভিযানের শুরুতে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে একজন পাচারকারীকে আটক এবং চারজন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর ভিকটিমদের কাছ থেকে লোমহর্ষক এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। সংঘবদ্ধ চক্রকে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান এবং কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসানের পরিকল্পনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি ও র্যাবের কয়েকটি চৌকস আভিযানিক দল লে. কর্নেল আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকা থেকে রাজাছড়া পাহাড়ের ওপরে রুদ্ধশ্বাস চিরুনি অভিযান শুরু করে। অভিযানের প্রথম ধাপে ১৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ১৩ জন, তৃতীয় ধাপে ৫১ জন এবং চতুর্থ ধাপে ছয়জন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। বিজিবি অধিনায়ক জানান, রাজাছড়ার পাহাড়ে অভিযানের সময় পলায়নরত পাচারকারীরা মরিয়া হয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং অপহরণকারীরা এ সময় বেশ কিছু জিম্মিকে পাহাড়ের নিচে ঠেলে দেয়।
যৌথ বাহিনী তাৎক্ষণিক পাহাড়াটিকে ঘিরে রেখে খাড়া ঢাল বেয়ে সশস্ত্র পাচারকারীদের ধরতে পাহাড়ের চূড়ায় কৌশলে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে বাহারছড়া উত্তর কচ্ছপিয়ার সালামত উল্লাহর ছেলে আবদুল্লাহ (২১), টেকনাফ সদরের বটতলী রাজাছড়ার আবুল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) এবং মো. ফিরোজের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২০)-কে আটক করে।
ঘটনাস্থল থেকে বুলেটভর্তি একটি ওয়ান শুটার গান ও একটি একনলা বন্দুক, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি দেশি রামদা ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়। একই দিন দমদমিয়া বিওপির বড়ইতলী এলাকা থেকে আরও চারজন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। যৌথ অভিযানে বিভিন্ন পাহাড় থেকে ৮৪ জন ভিকটিম উদ্ধারের ঘটনায় বাহারছড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াখালীপাড়া এলাকার মৃত মীর কাসেমের ছেলে রেজাউল করিম (৩৭), মমতাজ সদরের ছেলে আয়াতুল তনজিদ (৩০)-কে পলাতক আসামি করে মামলা করা হয়েছে। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান (পিএসসি) জানান, এ অভিযানে গ্রেপ্তার তিনজন আসামির বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে স্থানীয় থানায় মামলা হয়েছে।