রাজশাহীর উপশহর এলাকার মোজাম্মেল হক (ছদ্মনাম)। কয়েকদিন আগে তাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোজাম্মেলকে হত্যার হুমকি দিয়ে প্রথমে ২০ লাখ, এরপর ১৫ লাখ, সবশেষ ৭ লাখ টাকায় রফা হয়। তার স্ত্রী হাতে-পায়ে ধরে দেড় লাখে ম্যানেজ করে ছাড়িয়ে আসেন। ছাড়া পাওয়া মোজাম্মেল জানান, যারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা সবাই বয়সে কিশোর। নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের পরিচয় দিয়েছিল। টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। যেহেতু ‘মব’ সৃষ্টি করে হত্যা করা হচ্ছে, এ কারণে ভয়ে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে মনে করেন তিনি। এবং তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকে।
শুধু মোজাম্মেল নন, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে নগর ছাড়িয়ে উপজেলাগুলোতেও। রাজশাহীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় নানা নামে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এর মধ্যে আছে- টেন স্টার বয়, রাইজিং বয়, অদম্য বালক, গল্লি বয়, সুইট বয়, ওরা টপটেন, পারলে ঠেকা, দি-হট বয়েজ, হট বয়েজ কিশোর গ্যাং, সিএনবি বয়েজ, হিটার বয়েজ, রাজশাহী ডেঞ্জার বয়েস (আরডিবি), খুলিপাড়া গ্যাং, বিটক্যাল গ্রুপ, বুলেট গ্যাং, গুড়িপাড়া কিংস- এমন নামে চলছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। দিন কয়েক আগে নগরীর মেহেরচণ্ডী এলাকার সরকারি কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের বাড়িতে গত ১২ অক্টোবর হামলা চালায় একদল কিশোর গ্যাং। বাড়ি ভাঙচুর করে। ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় অভিযোগ দিতে বলে। থানায় যান নুরুল ইসলাম। কিন্তু মামলা নেয়নি পুলিশ। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় গেলে ওসি সাহেব বলেন কাল আসেন, সকালে আসেন, বিকালে আসেন। শেষ পর্যন্ত আমার অভিযোগ নেননি।’ তার ধারণা ওই কিশোরদের রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা বা দিন সব সময় এখন আতঙ্ক। এদের অনেকেরই দামি মোটরসাইকেল আছে। সন্ধ্যা নামলেই তারা তিনজন করে মোটরসাইকেলে উঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। পথে কোনো পথচারী বা অটোরিকশা যাত্রীর ব্যাগ দেখলেই তারা টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গত এক মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন অর্ধশত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে ছিনতাইয়ের চেয়ে দখলদারত্বের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বহু গুণে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গাজীউর রহমান জানান, পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক সক্রিয় হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা ভুক্তভোগী, তাদেরও অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন কেউ-ই নিরাপদ নয়। প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে, নগরবাসীকে রক্ষার জন্য।