২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত হবে বাংলাদেশ। এরপর ওষুধসহ বিভিন্ন রপ্তানি খাতে বর্তমানে পাওয়া অগ্রাধিকারমূলক শুল্কছাড়, কম সুদের ঋণ এবং বিশেষ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা দেওয়া হলেও উত্তরণের পর সেগুলোও আন্তর্জাতিক নীতিগত কারণে বাতিল হয়ে যাবে।
এ পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প কী কী সুবিধার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারের বৈঠকে লজিস্টিক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব উঠে এসেছে।
সরকারও এ প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল কেনায় ভ্যাট মওকুফ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রচলিত নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা নীতি বজায় রাখা সম্ভব না হলে সরকার লজিস্টিক সুবিধাকে পরবর্তী যুগের
মূল প্রণোদনা কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করছে। নীতিনির্ধারকদের মতে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে লজিস্টিক দক্ষতা ও ব্যয় হ্রাসই হবে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।
এলডিসি মর্যাদা হারানোর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান ও ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার কমবে। ওষুধশিল্পের জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্যসংক্রান্ত মেধাস্বত্ব অধিকার চুক্তির পেটেন্ট মওকুফ সুবিধা শেষ হবে। সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে এবং রপ্তানিকারকদের ব্যবসা পরিচালনায় মোট ব্যয় বাড়বে।
ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, অতিরিক্ত শুল্ক ও উচ্চ ব্যয়ের ঋণ রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার একটি মসৃণ উত্তরণ কৌশল প্রণয়নের কাজ করছে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বাণিজ্যনীতি সংস্কারের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে বিভিন্ন লজিস্টিক সাপোর্ট। এর আওতায় রয়েছে রপ্তানি পণ্য পরিবহনব্যবস্থায় বিশেষ ছাড়। আধুনিক গুদামজাতকরণ ও গুদাম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপে দক্ষতা বাড়ানো। সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রক্রিয়ার সমন্বয় জোরদার। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমাতে লজিস্টিক সাপোর্ট অ্যানালাইসিস। গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর ছাড়। বন্দর ব্যবহারের খরচ কমানো। এনবিআরের চার্জ ও ফি হ্রাস। বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ওয়্যারহাউস ভাড়ায় ছাড়। রপ্তানিতে ব্যবহৃত স্থানীয় কাঁচামাল কেনায় ভ্যাট মওকুফ।
এলডিসি উত্তরণের পর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে সরকার ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে কেনা কাঁচামালে ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। এনবিআর জানিয়েছে, ‘উদ্দেশ্য রপ্তানি’ব্যবস্থার আওতায় নির্ধারিত নিয়ম মেনে স্থানীয়ভাবে পণ্য ও সেবা কিনলে ভ্যাট ছাড় পাওয়া যাবে। এর জন্য প্রয়োজন বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন, ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন বা ইউটিলাইজেশন পারমিশনের নথিভুক্তি, অনুমোদিত বন্ডেড বা বিশেষ বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা ব্যবহার। এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো স্থানীয় উপাদান ব্যবহারে রপ্তানি পণ্যে দ্বৈতকরের সমস্যা দূর করা এবং পিছিয়ে থাকা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে উৎসাহ দেওয়া।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন রপ্তানি অব্যাহত রাখতে কী কী সুবিধা দেওয়া যায়, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে লজিস্টিক সুবিধাই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এ বিষয়ে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স নেওয়ার শর্ত এখন আর সময়োপযোগী নয়, কারণ স্থানীয় কাঁচামাল এখন ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।’ তাঁর মতে ভ্যাট ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বন্ডেড লাইসেন্সের বদলে রপ্তানি আয়ের পুনঃআহরণের প্রমাণই যথেষ্ট হওয়া উচিত।’